অনলাইন প্রতিনিধি :-তারিখের ফাঁসে দেশ এবং রাজ্যের বিচার ব্যবস্থা। বিচার ব্যবস্থার এই পরিস্থিতি নিয়ে নিজের উষ্মা চেপে রাখতে পারেননি দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তার মুখ দিয়েও বেরিয়ে এসেছিল নব্বইয়ের দশকের সাড়াজাগানো বলিউড সিনেমা ‘দামিনি’-র বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সংলাপ ‘তারিখ পে তারিখ’।প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, দেশের আদালতগুলি তারিখ পে তারিখের আস্তানা হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশের বিচার অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে আদালতের দরজায় দরজায় চক্কর কাটতে হচ্ছে। তারপরও বিচার পাচ্ছে না।নব্বইয়ের দশকে বলিউডে মুক্তি পেয়েছিল রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত ছবি ‘দামিনি’। সেই ছবিতে আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল। তার মুখেই শোনা গিয়েছিল সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘তারিখ পে তারিখ’।দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্য ত্রিপুরার বিচার ব্যবস্থাও সেই তারিখ পে তারিখের ফাঁসে জর্জরিত। তারিখ পে তারিখ রোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে আদালতে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে। সম্প্রতি এমনই এক অভিযোগ পাওয়া গেছে বিচারপ্রার্থী এক অসহায় গরিব গৃহবধূর কাছ থেকে। শ্বশুরবাড়িতে সীমাহীন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ওই অসহায় গৃহবধূ গত ২০১১ সাল থেকে আজ ২০২৫ শেষ প্রান্তে, দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একাধিক আদালতের দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে চলেছেন। বিস্ময়কর ঘটনা হলো, আজ পর্যন্ত ওই নির্যাতিতা ন্যায় বিচার পাননি। গত পনেরো বছর ধরে একাধিক আদালতে ওই নির্যাতিতা ১৪৭ দিন (যতটা তথ্য পাওয়া গেছে) হাজিরা দিয়েছেন। মামলার প্রতিটি তারিখে ওই নির্যাতিতা আদালতে উপস্থিত থেকেছেন। কিন্তু আজও তিনি ন্যায় বিচার পাননি। শুধু তারিখ পে তারিখ চলছে। সব থেকে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীর ভূমিকা নিয়েও। বীতশ্রদ্ধ ওই নির্যাতিতা বাধ্য হয়ে গত ২০২৩ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার সাথেও সাক্ষাৎ করে তার অসহায়ত্বের কাহিনী তুলে ধরে ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী খুবই আন্তরিকভাবে তার কথা শোনেন এবং জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্যাতিতার একটা কাজের ব্যবস্থা করার জন্য। জেলাশাসকও তদন্ত করে যথারীতি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট মোতাবেক মামলা আসে আগরতলা সিজেএম কোর্টে। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হলো, আজও সেই মামলা ঝুলে আছে। আজও ওই নির্যাতিতার কোনো কাজের ব্যবস্থা হয়নি। আজও তিনি বিচার পাওয়ার আশায় আদালতে দিনের পর দিন চক্কর কেটে যাচ্ছেন। আইনজীবীর হাতে পায়ে ধরে কাতর আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন। অথচ অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হতে হচ্ছে না। টাকা দিয়েই সবকিছু ম্যানেজ করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই অসহায় নির্যাতিতা গৃহবধূর নাম সীমা রাণী সরকার। বাড়ি সোনামুড়া মহকুমার কাঁঠালিয়া উত্তর মহেশপুরে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৭ জুন সামাজিকভাবে বিয়ে হয়েছিল আমতলি থানার অন্তর্গত মুছকুরি এলাকার বাসিন্দা মৃত পরিমল চন্দ্র দেবের পুত্র ঝুটন দেবের সাথে। অভিযোগ, বিয়ের সময় দাবি অনুযায়ী যাবতীয় সামগ্রী এবং নগদ অর্থ দেওয়া সত্ত্বেও বিয়ের ছয় মাস পর থেকেই তার উপর আরও পণের জন্য স্বামী, শ্বাশুড়ি এবং ননদের অত্যাচার শুরু হয়। সীমার গর্ভের সন্তানকেও হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, ২০১১ সালে সীমাকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই থেকে সীমা বিচারের আশায় থানা পুলিশ, মহিলা কমিশন, আদালতে চক্কর কেটে চলছে। আজও বিচার পাননি নির্যাতিতা সীমা। বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন সীমা।