এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

১৯৭১ সালে দেশটির জন্মের পর এই অবধি তিন তিনটি অভ্যুত্থান দেখিতে হইল। প্রথম অভ্যুত্থান ছিল সেনা অভ্যুত্থান। রক্তাক্ত ক্ষমতার হস্তান্তরে সপরিবারে হত্যা করা হইল শেখ মুজিবুর রহমানকে।পরের দুটি অভ্যুত্থান গণঅভ্যুত্থান। প্রথমটিতে প্রধানমন্ত্রী হোসেইন মহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়া ঘরে ফিরিয়া আসিলেন।কিন্তু দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়িতে হইল।আর আবারও আক্রমণের শিকার হইলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাহার মূর্তি ভাঙা হইল। বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তাহাদের ঐক্য, ছাত্র নাগরিকের স্বার্থে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা সহ সংখ্যালঘুদিগকে রক্ষার কথা বলিলেও এই অবধি মূর্তি ভাঙা লইয়া কোনও কথা বলে নাই।
অবশ্য ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নানা ধরনের শ্লোগান শোনা গিয়াছে।সেই সকল শ্লোগানের কোথাও কোথাও শেখ মুজিবকে অস্বীকার করিবার কথাও ছিল।তবে কি সেই কারণেই মুজিবের মূর্তি ভাঙা লইয়া চুপ রহিয়াছে আন্দোলনের সমন্বয়কেরা?যদি তাহাই হয় তবে প্রশ্ন আসিবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করিতেছে?পাকিস্তানের শাসন মুক্তির জন্য লক্ষ বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মবলিদানের ইতিহাস কি তাহারা ভুলিতে চাহিতেছে? এর স্পষ্ট জবাব পাইতে হইলে হয়তো আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করিতে হইবে।
তবে বাংলাদেশে বিজয় দিবস একাধিক, ইহাতে সন্দেহ নাই। বারবার আসিয়াছে বিজয়। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের যাত্রায় সেই সকল বিজয়ের সম্ভাবনাগুলি কাজে লাগাইতে পারে নাই।বারবার নানা অনৈক্য তাহাদের ঘিরিয়া ধরে।অনৈক্য হইতে মতানৈক্য আসিয়া সমস্ত কিছু তছনছ করিয়া দিয়া গেছে।ইহার পুনরাবৃত্তি যে এই দফায়ও ঘটিবে না তাহার কোনও গ্যারান্টি নাই।এর মধ্যে ১৯৭২ সাল এবং ১৯৭৫ সালের স্বপ্নভঙ্গের কথা প্রণিধানযোগ্য।গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সুশাসন, ভোটাধিকার ইত্যাদির স্বপ্নে ১৯৬৯ সাল হইতে ১৯৭১ সাল অবধি বাংলাদেশে যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম চলিয়াছিল তাহা স্বাধীনতার পর অনৈক্যে পর্যবষিত হয়। সেই সময়কার যাহারা পরবর্তীতে সেই ব্যর্থতার কারণ পর্যালোচনা করিয়াছেন তাহারা মনে করেন স্বাধীনতা লাভের পর সেই ঐক্যে আবেগ আর মোহ আদর্শকে ছাপাইয়া গিয়াছিল বলিয়াই ব্যর্থ হইতে হইয়াছিল।সেই দিন জাতীয় সরকার গঠন করা হয় নাই আত্ম অহমিকার কারণে।এই সিদ্ধান্ত হইয়াছিল ঐক্য বিরোধী।১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রিগিং করা হইয়াছিল,আর ইহা ছিল মহাপাপ, কারণ মুক্তি যুদ্ধের যে স্বপ্ন তাহাতে জনগণের ভোটাধিকারের কথা বলা হইয়াছিল।সেই দিন বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্ত আর একটি ঐক্যবিরোধী কাজ হইয়াছিল।শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হইলেও যোদ্ধারা কেহ তাহাকে স্ট্যালিন বা সম্রাট আকবর বলিয়া মানিয়া লন নাই।তাই বাকশাল ছিল রাজনৈতিক অঙ্গীকার লঙ্ঘনের একটি কারণ।অতএব দেশ স্বাধীন হইলেও, বাংলাদেশে বিজয় আসিলেও দেশটি দেশ হইতে পারিল না।
দ্বিতীয় বিজয় আসিয়াছিল ১৯৯১ হইতে ১৯৯৬ এই সময়ের পর্বে।নির্বাচনে জয়ী দলটি পূর্বের দলগুলির ভুলের পুনরাবৃত্তি করিয়া বসিল। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য এমন মানসিকতা ও অহমিকায় গ্রস্ত হইল।কেয়ারটেকার সরকার না গড়িয়া উপনির্বাচনে কারচুপি করিল।গায়ের জোরে নির্বাচন করিল।এই সময়কালও বিজয় উৎসবে শামিল হওয়া মানুষগুলিকে হতাশ করিয়াছিল।বাংলাদেশ আর গণতন্ত্রী হইতে পারিল না। বরং শাসন ক্ষমতায় যাহারাই পৌঁছাইলো সকলেই স্বৈর শাসনতন্ত্রী হইয়া উঠিল। সেইদিক হইতে বাংলাদেশ এইবার তৃতীয়বার বিজয় উৎসব উদ্যাপন করিতেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই অবধি সফল। এরশাদের জমানা অবসানে যে গণ অভ্যুত্থান আসিয়াছিল তাহার নেতৃত্বে ছিল তিন রাজনৈতিক দল বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বামদল। এইবার অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে কোনও রাজনৈতিক দল নাই, সকলেই ছাত্র, তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সফল অভ্যুত্থানের জন্য অভিনন্দিত করছে বাংলাদেশ।
কিন্তু কথা আসিতেছে ছাত্রদল রাষ্ট্রনির্মাণে কাঁহাতক নিজেদের যুক্ত রাখিতে পারে। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন একটি সরকারকে কীভাবে ছুড়িয়া ফেলিতে পারে তাহার তাজা উদাহরণ আজকের বাংলাদেশ। কিন্তু উহার পর? এইবার যে কাজগুলি একে একে সামনে আসিবে তাহার সঙ্গে যুঝিয়া চলা ছাত্রদের পক্ষে কাঁহাতক সম্ভব?যতুটুক সম্ভব হইবে তাহার সবটাই হইতে পারে শুধু ঐক্যের কারণে।প্রথম ও শেষ অস্ত্র হইবে ঐক্য।এই ঐক্য ভাঙাইতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিবে সকল দল। যাহারা পক্ষে, যাহারা বিপক্ষে সকলেই।কারণ দলগুলির স্বার্থের সঙ্গে এক্ষণে ছাত্র ঐক্যের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবার আগে প্রয়োজন নৈরাজ্য বন্ধ করিয়া শান্তি প্রতিষ্ঠা।এই কাজে সকলের আগে সবচাইতে অধিক দায় ছাত্রদলেরই। কারণ অভ্যুত্থান ঘটিয়াছে তাহাদের একতায়। নৈরাজ্য আসিতেছে অভ্যুত্থানের বিজয়ের হাত ধরিয়া।এক বিশ্ব আজ চাহিয়া আছে বাংলাদেশের ছোটবড় সকল ঘটনাপ্রবাহের দিকে। আর সেই বিশ্বে সর্বাগ্রে অপলক বাংলাদেশের বাইরের প্রতিটি বাঙালি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

4 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

5 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

6 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

7 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

7 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

8 hours ago