ফেন্সিকাণ্ডে রিমান্ডে মান্ত, বিস্ফোরক তথ্য!তল্লাশি কুখ্যাত অপুর বাড়িতে, নেশায় জড়িত বিএসএফ, কাস্টমের একাংশ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জিরানীয়ায় রেলস্টেশনে পণ্যবাহী ট্রেনে কফ সিরাপ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্তে নেমে বহু প্রভাবশালীদের নাম পাচ্ছে ক্রাইম ব্রাঞ্চের এনটি নারকোটিক্স শাখা। সবথেকে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, বিএসএফ, কাস্টমসেরও কয়েকজন অফিসার কর্মীর নাম উঠে এসেছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসছে বিএসএফ এবং কাস্টমসের একাংশ আধিকারিকের নাম। এমনকী রেলের একাধিক কর্মীর নামও উঠে এসেছে জিজ্ঞাসাবাদে। এমন কিছু নাম তদন্তে উঠে এসেছে যাদের গ্রেপ্তার করা ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এই নেশা পাচার চক্রের জাল দিল্লী, আসাম, পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়ে রয়েছে। ওই রাজ্যগুলোর কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে।যে কারণে জিরানীয়ায় রেলস্টেশনে নিষিদ্ধ কফ সিরাপ উদ্ধারের মামলা সিবিআইয়ের হাতে দিতে চাইছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। এদিকে,মঙ্গলবার কুখ্যাত নেশাকারবারি মান্তনু সাহা ওরফে মান্তকে পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত দায়রা আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাকে আদালত নয়দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একইদিনে বক্সনগরে উত্তম কলমচৌড়ায় আরেক কুখ্যাত নেশাকারবারি অপু রঞ্জন দাসের বাড়িতে অভিযান চালায় ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা। ক্রাইম ব্রাঞ্চ জানতে পারে, অপু বিএসএফের চারজন জওয়ানের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পালিয়ে গেছে। বর্তমানে সে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থান করছে।তাকে কিছুদিন আগেই এক মঞ্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য ও বিজেপি বিধায়ক তফাজ্জল হোসেনের পাশে দেখা যায়। তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মঞ্চে। কুখ্যাত ফেন্সিডিল কারবারি অপুর মঞ্চে দেখা যাওয়াকে ঘিরে এসডিপিও এবং ওসিকে শোকজ পর্যন্ত করেছিলেন পুলিশ সুপার। এর জবাবে তারা নাকি জানিয়েছেন, বিধায়কের কথায় তারা বাধা দেননি। এই অপুর বাড়িতেই মঙ্গলবার অভিযান চালায় ক্রাইম ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌভিক দে, ইনস্পেক্টর সুকান্ত সেন চৌধুরী। যদিও ক্রাইম ব্রাঞ্চের এই অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যায় অপু। যথারীতি বিএসএফের চার জওয়ানের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পালিয়ে যায়। এই খবর ক্রাইম ব্রাঞ্চ পেলেও, তদন্তকারী অফিসারদের পক্ষে বিএসএফের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার মতো অধিকার নেই। এমনকী শাসকদলের বিধায়ককেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছেন না ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা। সিবিআইয়ের মতো সংস্থা এই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে অভিমত কয়েকজন পুলিশ অফিসারের।
অন্যদিকে, মাস্তুকে নয়দিনের রিমান্ডে নিয়ে ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা টানা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, মান্তু জিজ্ঞাসাবাদে বিদ একের পর এক প্রভাবশালীর নাম নিতে শুরু করেছে। কাস্টমস ও বিএসএফের কয়েকজনের নাম বলেছে। তারা নেশার সিরাপ রাজ্যে আনতে ও বাংলাদেশে পাচার করতে সাহায্য করে। এছাড়া গান্ধীগ্রাম বাজারের এক নতুন রাবার ব্যবসায়ী, ভট্টপুকুর এক বিড়ি সংস্থার মালিকের ছেলে, আড়ালিয়ার এক নেশার সিরাপ কারবারির নাম পেয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। ইতিমধ্যেই তাদের বাড়িতে নজর রাখতে শুরু করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এরমধ্যে একজন নেশা কারবারি ইতিমধ্যেই রাজ্যছাড়া। মোবাইল পর্যন্ত ব্যবহার করছে না। এই তথ্য পেয়েছেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের – অফিসাররা। প্রত্যেকের বাড়িতে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। ক্রাইম – ব্রাঞ্চের হেপাজতে জিরানীয়ায় রেলস্টেশনে নেশাকাণ্ডে চারজন আছে। এর মধ্যে অরুণ ঘোষ এখনও জিবি হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে এত নতুন বিএনএস আইন অনুযায়ী তার আবারও দশদিনের রিমান্ড চাইবেন ক্রাইম এল ব্রাঞ্চ অফিসাররা বলে জানা গেছে। এদিকে, মান্তু জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন থানার কত ওসির নামও বলে দিয়েছে। এই অফিসারদের টাকা দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখত। দিল্লী থেকে অনেকবারই ট্রেনে নেশার সিরাপ এনেছে মান্তু এবং অপু মিলে।তাদের নেশাদ্রব্য তেলিয়ামুড়া এবং জিরানীয়া রেলস্টেশনে নামানো হতো। থানার ওসিদের আগে থেকেই টাকা পৌঁছে দিত অভিযুক্তরা। যে কারণে এই নেশার – সিরাপ আটক হতো না। মাত্তকে কখনও গ্রেপ্তারের চেষ্টাও করেনি পুলিশ। যদিও – অপু রঞ্জন দাসের নামে মুঙ্গিয়াকামী থানায় একটি মামলা হয়েছিল। এই মামলায় — তার নামে ওয়ারেন্টও জারি করা আছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তার – বাংলাদেশে বাড়ি রয়েছে। সেখানে নাগরিকত্বও নিয়ে রেখেছে। অপুর ঘর থেকে তল্লাশি করে বেশকিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্ত টিমের – এক অফিসার জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিশাল বড় চক্র জড়িত নিষিদ্ধ নেশার সিরাপকাণ্ডে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ কাস্টমস, বিএসএফ সহ রেলের একাধিক কর্মীকে আইনত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনতে সমস্যায় পড়ছে। যার ফলে তদন্তে দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চাইছে পুলিশ প্রশাসন।

Dainik Digital: