প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্যে কৃষি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতিঃ রতন!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)
FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্যের কৃষি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সম্পদের। কীভাবে এবং কতদিনে এই ক্ষতি পুষিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যাবে? এ নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ। শুক্রবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে বিগত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে গোটা রাজ্যে কৃষি, উদ্যান ও বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির যে প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরেছেন তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। আগামীদিনে এই ক্ষয়ক্ষতির মারাত্মক প্রভাব পড়বে রাজ্যের অর্থনীতিতে এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষা এখনও শুরু করাই যায়নি। কেননা, শুক্রবার বন্যার জল কমতে শুরু করলেও, এখনও রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় জল রয়ে গেছে।এটা শুধু প্রাথমিক হিসাব। ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা মুশকিল।সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী জানান,এবছর আমরা ভালো ফসল উৎপাদনের আশা করেছিলাম। ধান থেকে শুরু করে শাকসবজি, সবকিছু এবার ভালো উৎপাদন হতো।কেননা, এবার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত থেকে শুরু করে সবকিছু কৃষকের অনুকূলে ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় সব শেষ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বন্যার কারণে রাজ্যের ৬৮ হাজার ৮২৬ হেক্টর কৃষিজমি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরফলে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৪০৬ জন কৃষক মারাত্মক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮১৬ মেট্রিকটন ফসল নষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৫৩২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। মন্ত্রী জানান, শুধু ভূমিধসের কারণে ৪ হাজার হেক্টর জুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ১ লক্ষ ৫ হাজার ১০১ হেক্টর আমন ধানের জমি জলের তলায় রয়েছে। উদ্যান চাষের ক্ষেত্রে সারা রাজ্যে ৫ হাজার ৬১৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। এরমধ্যে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এই জমিগুলি থেকে ৩০ হাজার ৪৯৭ মেট্রিকটন শাকসবজি উৎপাদন হতো।এর ফলে ২৭ হাজারের উপর কৃষকের ১৬৭ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটা প্রাথমিক তথ্য। জল সম্পূর্ণ নেমে যাওয়ার পর সমীক্ষা শুরু হলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য উঠে আসবে। শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বড় ধরনের পরিকাঠামোগত এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে। এক কথায় ভয়াবহ অবস্থা। মন্ত্রী জানান, রাজ্যে মোট বিদ্যুৎ ভোক্তার সংখ্যা হচ্ছে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৫১ জন। এরমধ্যে অ্যাক্টিভ গ্রাহকের সংখ্যা হলো ৯ লক্ষ ৫ হাজার ৬১৪ জন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সারারাজ্যে ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৭৩ জন গ্রাহক নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিদ্যুতের ১ হাজার ৬০৩ টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ৫০১টি ট্রান্সফরমার, ৬৪২ কি.মি. কন্ডাকটরস তার,৩৩ কেভি এবং ৬৬ কেভি ২টি সাব-স্টেশন সম্পূর্ণভাবে ড্যামেজ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়টি স্থানে ৩৩ কেজি বৈদ্যুতিক লাইন ব্রেক ডাউন হয়ে গেছে। এরমধ্যে চারটি স্থানে লাইন সারাই করে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। বাকিগুলি সারাইয়ের কাজ চলছে। তবে কয়েকটি জায়গায় এখনও জল থাকায় লাইন সারাই করা যায়নি। মন্ত্রী জানান, আগরতলা শহরের বিভিন্ন এলাকার ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬৩২ জন গ্রাহক প্রভাবিত হয়েছেন। আগরতলাতে ১৫টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় পরিষেবা অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ দপ্তরের ৯ কোটি ২ লক্ষ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করার জন্য ৮-১০ জনের ১১১টি গ্রুপ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আগরতলা শহরে কাজ করছে ২৫টি গ্রুপ। গোমতী এবং দক্ষিণ জেলার অনেক স্থান জলমগ্ন থাকায় বিদ্যুৎকর্মীরা সারাইয়ের কাজ করতে পারছেন না। মন্ত্রী জানান, সমস্যা সত্ত্বেও রাজ্যের হাসপাতালগুলো, রেলস্টেশন সহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস, আদালতগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চলছে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী ডম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়া নিয়ে যে বিভ্রান্তি এবং ভুয়ো সংবাদ ছড়িয়েছে, এই বিষয়েও প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ডম্বুর বাঁধের জলধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৯৪ মিটার। এর উপরে জলস্তর বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জল বেরিয়ে যায়। আবার জলস্তর কমে গেলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এখানে গেট খোলা বা বন্ধ করার কোনও প্রশ্ন নেই। মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের একটি অংশের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, এটা ঠিক নয়। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। মন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বে আমরাই একমাত্র বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে ১৮০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। আমরা তো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারতাম। কিন্তু এটা হয় না। কেননা এটা দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালে আগরতলা শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এরপর ১৯৮৩, ১৯৯৩, ২০২০, ২০২১ সালেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের আগষ্ট মাস সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। সাধারণত আগষ্ট মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, এর থেকে কয়েকগুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আগরতলাতেই বৃষ্টি হয়েছে ৫৩৮.৭ মিলিমিটার। দক্ষিণ জেলায় এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল গড়ে ২৫২ মিলিমিটার। হয়েছে ৯৮১.১ মিলিমিটার। গোমতী জেলায় হওয়ার কথা ১৯০ থেকে ১৯৫ মিলিমিটার, হয়েছে ৬৫৬.৬ মিলিমিটার।পশ্চিম জেলায় স্বাভাবিকের চাইতে ১৬৩ শতাংশ বৃষ্টি বেশি হয়েছে।

FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp
Dainik Digital

Recent Posts

সিকিমে ধসে আটকে থাকাদের উদ্ধারে এয়ারলিফ্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পর্যটকদের এয়ারলিফ্ট দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করল সেনা…

3 hours ago

পাকিস্তানের জেল থেকে পালালো ২০০ জেলবন্দী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানের করাচিতে মালির কারাগার থেকে ২১৬ জন কারাবন্দি কয়েদি পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে…

8 hours ago

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে, ৫২জনের মৃ*ত্যু !!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৫২জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত পাঁচ শতাধিক। অবরুদ্ধ…

10 hours ago

জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি প্রধানমন্ত্রী মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-চলতি মাসের ১৫ থেকে ১৭ জুন কানাডাতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন। এই…

10 hours ago

তুরস্কে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ১!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মারমারিস এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু…

10 hours ago

সিসিলি দ্বীপে মাউন্ট এটনায় আগ্নেয়গিরির তাণ্ডব!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইতালির সবচেয়ে সক্রিয় দক্ষিণ-পূর্বের মাউন্ট এটনার আগ্নেয়গিরির একটি বড় অংশ ধসে পড়ে।…

10 hours ago