অনলাইন প্রতিনিধি :-সরকারী চাকরির লিখিত পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বেকার চাকরি প্রার্থীরা। যদিও গত ২৫ এবং ২৬ অক্টোবর ৮৫টি বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের দিন পর্যন্ত নানা অভিযোগে জর্জরিত সরকার। নয়া সংযোজন প্রশ্ন ফাঁসের কেলেঙ্কারি। শুধু তাই নয়, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে পথে নামলেন বেকাররা।এমনকী আজ আধিকারিকশূন্য স্বাস্থ্য দপ্তরে ডেপুটেশন পেশ করেছেন ক্ষুব্ধ বেকাররা। বেকার বিক্ষোভের ভয়ে আগেই দপ্তর থেকে একপ্রকার পালিয়ে গেলেন আধিকারিকরা।
ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থী বেকাররা আজ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, সম্পূর্ণ বাঁকা পথে যোগ্যতাহীন বেকারদের চাকরি প্রদানের কৌশল নিয়েছে সরকার। যেদিন লিখিত পরীক্ষা হলো এদিন রাত থেকে দেখা গেল বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমাজিন টেকনোলজিস্ট, অপ্টোমেট্রিস্ট পদের প্রশ্নপত্র উত্তর সহ পাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী বেকাররা।অথচ পরীক্ষার দিন একজন চাকরি প্রার্থীকেও প্রশ্নপত্রগুলি পরীক্ষা সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রদান করলেন না স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক। প্রশ্নপত্রগুলি স্বাস্থ্য দপ্তর নিজেদের কাছে রেখে দিল। যদিও টিপিএসসি, জেআরবিটি এবং টিআরবিটি আয়োজিত নিয়োগ পরীক্ষা ও এম আর শিটে হলেও প্রশ্নপত্রগুলি পরীক্ষার পর বেকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যা করেনি স্বাস্থ্য দপ্তর। এখন সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার এক মাস আগে থেকেই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উত্তর সহ হুবহু বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রয়েছে। বেকারের অভিযোগ, ওএমআর শিট ও একাংশ চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পর নয়াভাবে প্রদান করা হয়েছে।জানা গিয়েছে,৮৫টি শূন্যপদ যথাক্রমে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ৩৯টি (ইউআর ২০, এসসি ৭, এসটি ১২), রেডিওলজি অ্যান্ড ইমাজিন টেকনোলজিস্ট ২৭টি (ইউআর ১৪টি, এসসি ৬টি এবং এসটি ৮টি), অপ্টোমেট্রিস্ট ১৯টি (ইউআর ১০টি, এসসি ৩টি, এসটি ৬টি) পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। যদিও এই লিখিত পরীক্ষা ২০১৮ সালের নয়া নিয়োগনীতি অনুযায়ী হয়নি। রাজ্যের ক্ষুব্ধ বেকাররা এই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আদালতে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অভিযোগ, ২০২৪ সালে এই পদগুলিতে লিখিত পরীক্ষা সাদা কাগজে নিয়েছিল দপ্তর। বর্তমান নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পর একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওএমআর শিটে পরীক্ষা নিল দপ্তর। যদিও চাকরি পরীক্ষার স্বচ্ছতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, ৮৫টি শূন্যপদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ২০১৮ সালে রাজ্যে প্রথম বিজেপি সরকারের নয়া নিয়োগনীতি মানা হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তরে ৮৫টি গ্রুপ সি শূন্যপদে নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে রাজধানীর রিপস্যাটে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। চাকরি প্রার্থীদের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র প্রদানের পরই পরীক্ষার নামে বেকার ঠকানোর পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য সরকারের ২০১৮ সালের নয়া নিয়োগনীতি মোতাবেক চাকরি পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগে বন্ধ করে দিতে হবে।অভিযোগ, পরীক্ষা সেন্টারের প্রবেশদ্বার পরীক্ষা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বন্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৮৫ নম্বরের পরীক্ষায় একই প্রশ্ন তিনবার এসেছে। – এমনকী ২৬টি প্রশ্নের ক্ষেত্রে একই উত্তর দু’বার করে প্রশ্নপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ৮৫ নম্বরের পরীক্ষায় যদি ২৬ প্রশ্ন নিয়ে ঘোটালা প্রমাণিত হয়। এমনকী উত্তরপত্রের সমস্যা নিরসনও না হয়।
২০১৮ সালের রাজ্য সরকারের নয়া নিয়োগনীতি অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রদান করতেই হবে। লিখিত পরীক্ষার ‘আনসার কি’ প্রকাশিত হবার পর চাকরিপ্রার্থীরা প্রশ্নপত্রে ‘অপশন’ আকারে থাকা উত্তরের সাথে ‘আনসার কি’ মাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফল দেখে পূর্ব অনুমান করতে পারেন। ‘আনসার কি’ প্রকাশিত উত্তরপত্রে বিরুদ্ধে দাবি ও আপত্তি যাতে সঠিকভাবে করতে পারেন পরীক্ষার্থীরা এই কারণেই উত্তরপত্র প্রদান করা হয়। এই নিয়ম মানছে টিআরবিটি, টিপিএসসি এবং জেআরবিটি কর্তৃপক্ষ।
অবাক কবার বিষয় হলো, সম্পূর্ণ নিয়ম লঙ্ঘন করে চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নপত্র প্রদান করলেন না স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। ফলে ‘টেনটেটিভ এবং ফাইনাল আনসার’ কি প্রকাশিত হলেও বেকার চাকরিপ্রার্থীদের কোনো দাবি আপত্তির সুযোগ থাকবে না। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ‘আনসার কি’ পর্যন্ত প্রদান হয়নি।২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৮৫টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।