পার্কিং সমস্যায় নাজেহাল রাজধানীবাসী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজধানী আগরতলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহন পার্কিং ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। সরকারী অফিস, আদালত, ব্যাঙ্ক, শপিং মল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে গিয়ে প্রতিদিনই শুধুমাত্র পার্কিং ব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্যে শহরবাসীকে চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ একদিকে ফাইনের জাঁতাকলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শহরে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকলেও রহস্যজনক ঘটনা হল, বেআইনি পার্কিংয়ের নামে আবার সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসন। ফলে প্রত্যেক দিনই বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অথচ স্মার্টসিটিতে বেহাল পার্কিং ব্যবস্থার মান উন্নয়ন নিয়ে এক প্রকার শীত ঘুমে রাজ্য সরকার।
রাজধানী আগরলতায় বাইক, স্কুটি, ই-রিকশা, ছোট বড় গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা না থাকলেও স্মার্টসিটির প্রচার প্রত্যেকদিনই হচ্ছে।ভূ-ভারতে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র এই শহর।শহরে প্রত্যেকদিন নতুন নতুন শপিং মল, রেস্তোরাঁ, সহ ফ্ল্যাট বাড়ি, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সূচনা হচ্ছে।তবে নেই পার্কিং ব্যবস্থা। যার খেসারত দিচ্ছেন রাজধানী আগরতলার লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ।এমনকী এই পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার সম্পূর্ণ দায় রাজ্য সরকারের হলেও উল্টো আরক্ষা দপ্তরের রোষানলে পড়ছেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ।শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। আর সাধারণ মানুষের এই পকেট কাটা অর্থে ভরছে সরকারের কোষাগার। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার পরও কীভাবে স্মার্টসিটির প্রচার হচ্ছে? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আগরতলার লেক চৌমুহনী বাজার এর উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রত্যেকদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই বাজারে উপচে পড়া ভিড় থাকে। তবে বাজারে আগতদের জন্য নেই পার্কিং ব্যবস্থা। তাই সাধারণ মানুষ তাদের বাইক, স্কুটি, গাড়ি, আস্তাবল ব্রিজ সংলগ্ন, রাধানগর ব্রিজে এবং বাজারের মূল রাস্তায় পার্কিং করছেন। ফলে প্রত্যেকদিন হচ্ছে যানজট। উল্টো আরক্ষা দপ্তর ব্যস্ত থাকছে ফাইন সংগ্রহে।
রাজধানীর মহারাজগঞ্জ বাজারের আরও বেহাল দশা।রাজ্যের এই প্রধান বাজারে পর্যন্ত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। তাই নেতাজী চৌমুহনী থেকে এমবিবি ক্লাব, রামঠাকুর সংঘ, গ্র্যান্ডিউজ ক্লাব থেকে সম্পূর্ণ সেন্ট্রাল রোড, মহারাজগঞ্জ বাজারের সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে চলছে যত্রতত্র পার্কিং। তাই এক ঘন্টার কাজ পাঁচ ঘন্টায়ও হচ্ছে না। একই হাল বটতলা, দুর্গা চৌমুহনী, মঠচৌমুহনী বাজারের। যেহেতু সাধারণ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি, তাই সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর গাড়ি, স্কুটি, বাইক পার্কিং করতে হচ্ছে। এর পরিণামে রাজধানীবাসীকে মোটা অঙ্কের ফাইন দিতে হচ্ছে।
রাজধানীর সেন্ট্রাল রোড, শকুন্তলা রোড, হরিগঙ্গা বসাক রোড, মন্ত্রীবাড়ি রোড, দুর্গা চৌমুহনী সহ সম্পূর্ণ রাজধানীতে গড়ে উঠেছে বহুজাতিক শপিং মল, অত্যাধুনিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতেও নেই পার্কিং ব্যবস্থা। ফলে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ বাইক, স্কুটি, গাড়ি পার্কিং করছেন রাস্তায়। একই হাল রাজধানীর হকার্স কর্নারের।
অবাক করার বিষয় হলো, রাজধানী আগরতলার একটি ব্যাঙ্কেরও নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। আর যেসব ব্যাঙ্ক এবং শপিং মলের নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে ঠেকেছে যে নিজেদের কর্মীদের পর্যন্ত পার্কিংয়ের স্থান দিতে ব্যর্থ ব্যাঙ্ক এবং শপিং মল কর্তৃপক্ষ। রাজধানী আগরতলার কর্নেল চৌমুহনীর এসবিআই (টিএলএ) ব্রাঞ্চ, অভয়নগরস্থিত ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়, সেন্ট্রাল রোডের ইউকো ব্যাঙ্ক, কামান চৌমুহনীর ব্যাঙ্ক অব বরোদা, হরিগঙ্গা বসাক রোডের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, এসবিআই মেলারমাঠ ব্রাঞ্চ, এসবিআই শ্যামলী বাজার ব্রাঞ্চ, বোধজং বয়েজ স্কুল সংলগ্ন কানাড়া ব্যাঙ্ক, এসবিআইর বাণিজ্যিক শাখা (জগন্নাথবাড়ি রোড) রাজধানীর আরও বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ ব্যাঙ্কের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। যার ফলে প্রত্যেকদিন বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তার একপাশে তাদের বাইক, স্কুটি, গাড়ি পার্কিং করছেন।
রাজধানীর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, আদালতে আইনজীবীরা পর্যন্ত গাড়ি, বাইক, স্কুটি পার্কিং সঠিকভাবে করতে পারছেন না। একই হাল রাজধানীর প্রধান দুটি হাসপাতালের, এমনকী প্রত্যেকটি সরকারী অফিসে পর্যন্ত পার্কিংয়ের সঠিক ব্যবস্থা নেই। এর উজ্জ্বল নিদর্শন হলো রাজ্যের মহাকরণ।
ফলে একদিকে মানুষের পকেট কাটছে আরক্ষা দপ্তর, অন্যদিকে প্রত্যেকদিন বাড়ছে বাইক, স্কুটি চুরির ঘটনা। আগরতলা পুর নিগমের পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা রাজধানীর সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসছে না বলে অভিযোগ। তাই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
অভিযোগ, রাজধানীতে টিআরটিসি সংলগ্নে ও এডিনগরস্থিত দুটি সিএনজি স্টেশনের জন্যে প্রত্যেকদিন ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে। অথচ সমস্যা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। ফলে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যবাসী।

Dainik Digital: