দুর্গাপুরে মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রী ধর্ষণের শিকার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আরজি কর কাণ্ডের ছায়া এবার দুর্গাপুরে। সেখানকার এক বেসরকারী মেডিকেল কলেজের পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা দুর্গাপুর। জানা গিয়েছে, যে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, তিনি ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। ডাক্তারি পড়তে দুর্গাপুরে রয়েছেন। গোটা ঘটনায় সরব হয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়ে নির্যাতনের শিকার হন দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকার একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া। অভিযোগ,কয়েকজন যুবক তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। পরে তরুণীর সহপাঠীই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। দুর্গাপুরের বেসরকারী হাসপাতালে গণধর্ষণের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাস্থ্যভবন। ওই বেসরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। ঠিক কী ঘটেছে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটলো-এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা অধিকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। নির্যাতিতার বাবা বলেন, রাত ১০টা নাগাদ ওর বন্ধু আমাকে ফোন করেছিল। এখানে চলে আসি তাড়াতাড়ি।সাড়ে ৯টা নাগাদ একটা ছেলে খাবার খেতে আমার মেয়েকে গেটের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ২-৩ জন চলে আসে। ছেলেটা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সময় একজন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। মোবাইল কেড়ে নেয়। ৩ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে পারেনি। পরে ছেলেটা আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসে। সেই সময় ৪-৫ অপরিচিত যুবক ছিল। তাদের হাতে ৩০০ টাকা ছিল দিয়েছিল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেয়ে। তখন মেয়েকে নিয়ে ওই ছেলেটা ফেরে।’ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে ডাক্তারি পড়ুয়ার সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ওই সহপাঠীর সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন তরুণী। যদিও ঘটনার সময় ওই সহপাঠী ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান। তার ভূমিকা তাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদৌ এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো যোগসাজশ রয়েছে কিনা, সে সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, বিষয়টি সংবেদনশীল। তাই সবদিক মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত চলছে। তথ্য হাতে আসামাত্রই জানানো হবে। ওই নির্যাতিতাকে হাসপাতালে দেখতে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। তিনি লিখেছেন, দুর্গাপুরের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বেদনাদায়ক। এই খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এটাই আর্জি। ওড়িশার পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের বাংলার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। নির্যাতিতার পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে। ইতিমধ্যে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন ওড়িশা পুলিশের পদস্থ আধিকারিক। ঘটনাটির তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর ফোরাম। এদিন বেসরকারী ওই
হাসপাতালের পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান। ধর্ষণের এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভউগরে দিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানাও ঘেরাও করেছে তারা। এর নেতৃত্বে রয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। পথ অবরোধে শামিল হল আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি বলেন, আরজি কর হোক বা দুর্গাপুর, ডাক্তারদের ধর্ষণ করা তো প্রবণতায় পরিণত হয়েছে এ রাজ্যে। এখানে যারা ধর্ষণ করে, তারা জানে যে তাদের মাথার উপর তৃণমূল রয়েছে। এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।’ বিরোধী দলনেতা আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এই ঘটনায় এফআইআর করা হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই রাজ্যে মেডিকেল কলেজ সরকারী হোক বা প্রাইভেট হোক- কোথাও কেউ যে সুরক্ষিত নয় তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেলো। দুর্গাপুজো-কালীপুজোর মধ্যেও এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। আমাদের রাজ্যের কন্যা-বোন তাদের আমরা. সুরক্ষিত রাখতে পারছি না, কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিচ্ছে না এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। পাল্টা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়েছেন যে, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এবং পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে। মেয়েটি ওড়িশার বাসিন্দা। তার বাবা-মা এখানে চলে এসেছেন এবং আস্থা প্রকাশ করেছেন রাজ্য সরকার এবং পুলিশি তদন্তের উপর। তার কথায়, ভারতীয় জনতা পার্টি এর মধ্যেও রাজনৈতিক মন্তব্য করছে। মহিলার উপরে কোনো অঅরাধ হলে রাজনৈতিক ফায়দা কিংবা রাজনৈতিক চশমা দিয়ে দেখাটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। পুলিশের এই তদন্ত চলতে দেওয়া উচিত এবং তার জন্য আমাদের অপেক্ষা যারা এরকম মন্তব্য করছেন তাদের বুঝতে হবে এরকমই এক মহিলা শিক্ষার্থীর উপর অপরাধ হলো, তাকে গায়ে আগুন দিলো, মারা গেলো। এগুলো হওয়া উচিত নয়। সেখানে বিজেপি সরকার। ফলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়

Dainik Digital: