অনলাইন প্রতিনিধি :-অর্গানিক কৃষি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা আরও এক কদম এগিয়ে গেলো।দেশের সীমানা পেরিয়ে এবার আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে উদ্যোগ নিলো রাজ্য সরকার।এরই ফলশ্রুতিতে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ত্রিপুরা অর্গানিক মিশনের অনুপ্রেরণামূলক সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। ১৭ নভেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে শুরু হয়েছে ‘মিডল ইস্ট ন্যাচারাল অ্যান্ড অর্গানিক প্রোডাক্টস এক্সপো ২০২৫’। এতে অংশ নিয়েছে ত্রিপুরাও।
বিশ্বজুড়ে শীর্ষ অর্গানিক উৎপাদক, ক্রেতা, বিনিয়োগকারী, প্রযুক্তি উদ্ভাবক ও সরকারী প্রতিনিধিদের এই মিলনমেলায় ত্রিপুরার অর্গানিক সম্ভাবনা প্রদর্শনের উদ্যোগ অনেকের নজর কেড়েছে। এই বিশ্ব বাণিজ্য মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ। সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ত্রিপুরার অর্গানিক বিপ্লবের সাফল্য তুলে ধরে সকলের নজর কাড়েন মন্ত্রী রতন লাল নাথ।রাজ্যের জিআই স্বীকৃত কুইন আনারস, কাঁঠাল, সুগন্ধি কালিখাসা ও হরিনারায়ণ ধান, বার্ডস আই চিলি, সুগন্ধি গন্ধরাজ লেবু, সাদা তিল ও কাউন (ফক্সটেইল মিলেট) তাদের উচ্চগুণমান, স্বাদ ও রপ্তানি যোগ্যতার জন্য প্রশংসা কুড়ান। জিসিসি অঞ্চল, ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আমদানিকারক ও বৈশ্বিক রিটেইলাররা এসব পণ্য সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করে। বিশ্ববাণিজ্য, উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক আসরে নিজের বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ত্রিপুরা আজ দেশের অন্যতম অগ্রসর অর্গানিক কৃষি রাজ্য হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে ত্রিপুরার ২৬,৪০০ হেক্টর ভূমি সার্টিফায়েড অর্গানিক চাষের আওতায়। যেখানে ২৬,৮০০ জনেরও বেশি কৃষক প্রচলিত চাষ থেকে টেকসই পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। কৃষকদের ক্ষমতায়ন ও মূল্য শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে ত্রিপুরা সরকার ও কৃষি দপ্তর প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে।মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে ৫৩টি অর্গানিক কৃষক উৎপাদক কোম্পানি (এফপিসি) গঠিত হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোই আমাদের কৃষিখেত ও বৈশ্বিক বাজারের মধ্যে সংযোগ তৈরি করছে। যেখানে সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্র্যান্ডিং ও সরাসরি বিপণনের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় উৎপাদিত জিআই-ট্যাগযুক্ত ‘কুইন আনারস’ বিশ্ববিখ্যাত ১৬ থেকে ২০ ব্রিক্স প্রাকৃতিক মিষ্টত্বের কারণে এটি টেবল ফুট ও ডেজার্টের জন্য আদর্শ। আর কিউ জাতের আনারস (১০-১৩ ব্রিক্স) প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য উপযুক্ত। ভাষণে কৃষিমন্ত্রী গন্ধরাজ লেবু, সুগন্ধি কালিখাসা ধান, স্টিকি রাইস (স্থানীয় ব্রাউন ভ্যারাইটি) এবং হ্যাঙ্গার প্রজাতির কালো চালের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, কালো চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ – এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম যা স্বাস্থ্যসচেতন বৈশ্বিক বাজারে এর চাহিদা বাড়াচ্ছে। আমাদের অর্গানিক চাষের আওতায় আদা, হলুদ, বার্ডস আই চিলি, তিল ও কাউনও রয়েছে যা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক রপ্তানি সম্ভাবনা রাখে।
তিনি বলেন, ভারতের অর্গানিক খাদ্য বাজার প্রতিবছর ১৫-২০% হারে বাড়ছে। জৈববৈচিত্র্য, প্রাচীন কৃষিজ্ঞান ও সরকারী সহায়তার সমন্বয়ে ভারত বিশ্ব জৈব রপ্তানি বাজারে নেতৃত্ব নেওয়ার পথে। মন্ত্রী ত্রিপুরার বিখ্যাত আগর উড, আগর অয়েল, আগর পারফিউম ও বাঁশ করুলের কথাও তুলে ধরেন এবং বলেন, এগুলো প্রকৃতির সম্পদ। ভাষণে মন্ত্রী বিশ্ব বিনিয়োগকারী, আমদানিকারক ও অংশীদারদের — আহ্বান জানিয়ে বলেন, ত্রিপুরায় আসুন, সহযোগিতা করুন, বিনিয়োগ করুন এবং ত্রিপুরা অর্গানিক-এর সঙ্গে উন্নতির পথে হাঁটুন। মন্ত্রী আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের ত্রিপুরায় আগামী জানুয়ারী ২০২৬-এ অনুষ্ঠিতব্য অর্গানিক ‘বায়ার – সেলার মিট-এ অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং রাজ্যের দ্রুত বর্ধনশীল জৈব খাতে বিনিয়োগের সুযোগগুলো অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করেন।ত্রিপুরা অর্গানিক মিশনের মিশন ডিরেক্টর রাজীব দেববর্মাও এ সফরে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।