দুই ধারার রাজনীতিতে জোর টক্কর পদ্ম-শঙ্খে!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)
FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার এই প্রতিবেদন যখন পাঠকের কাছে পৌঁছবে, তখন ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য ওড়িশায় লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার (সারা দেশে চতুর্থ দফা) ভোট শুরু হয়ে যাবে।ওড়িশায় প্রথম দফায় চারটি লোকসভা কেন্দ্র এবং ওই চারটি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। রবিবার সকাল থেকে ভোট কর্মীরা ভোট সামগ্রী নিয়ে নিজ নিজ কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছেন। সোমবার সকাল সাতটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। সোমবার যে চারটি লোকসভা নির্বাচন ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণ হবে সেই কেন্দ্রগুলি হল কালাহাণ্ডি, নবরঙ্গপুর, ব্রহ্মপুর এবং কোরাপুট। শনিবার বিকালে ওই চারটি কেন্দ্রে নির্বাচনি সরব প্রচার শেষ হয়েছে।কিন্তু ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফের
একবার ওড়িশায় এসে ভোটের উত্তাপকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন।এর আগে নবরঙ্গপুরে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করে গেছেন। শনিবার জনসভা করেছেন কান্ধামাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফুলবাণীতে।এদিন সন্ধ্যায় রাজধানী ভুবনেশ্বরে করেছেন বিশাল রোড শো প্রায় ৯৫ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণের বসতি ওড়িশা রাজ্য দখলে পদ্মশিবির যে এবার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতিটি বক্তব্যে, তার প্রতিটি শব্দচয়নে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের কথা বার্তাতেও স্পষ্ট যে বিজেপি ওড়িশা দখলে কতটা মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। একটানা পঁচিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি সরকার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে (অ্যান্টি ইনকামবেন্সি) হাতিয়ার করে এবার ওড়িশা দখলে মরিয়া বিজেপি এবং মোদি। তাই এবার আর কোনও রাখঢাক নেই।প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে নিশানা করে চলেছেন মোদি। নবীনবাবুর প্রতিটি দুর্বলতাকে প্রচারে তুলে এনে ওড়িশাবাসীর আবেগকে উস্কে দিচ্ছেন মোদি।একই কাজ করে চলেছে ওড়িশার বিজেপি নেতৃত্বও।
নিপাট ভদ্রলোক ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ওড়িশাতেই তার জন্ম।তার পিতা বিজু পট্টনায়কও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। নবীনবাবুর ছোটবেলা কেটেছে ভুবনেশ্বরে। গত আটাশ বছর ধরে রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন।এর মধ্যে শেষ কুড়ি বছর ধরে তিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন। কিন্তু ওড়িয়া ভাষাটা এখনও রপ্ত করতে পারেননি বিজু জনতা দলের (বিজেডি) প্রধান নবীন পট্টনায়েক।এবার ওড়িশায় একই সাথে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে নবীনবাবুর ওড়িয়া ভাষার দুর্বলতার প্রসঙ্গ তুলে নিশানা করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। শনিবারও ওড়িশার ফুলবাণীতে বিজেপির জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে নবীন পট্টনায়েককে নিশানা করেন মোদি।বলেন,এবার ওড়িশায় ডাবল ইঞ্জিনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।এরপরই বিজেপি এই রাজ্যে এমন একজন ভূমিপুত্র বা ভূমিকন্যাকে মুখ্যমন্ত্রী করবে, যিনি ওড়িয়া ভাষা জানেন।যিনি ওড়িশার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। এখানেই থেমে থাকেননি মোদি। নবীনকে খোঁচা দিয়ে আরও বলেছেন, যিনি নিজে ওড়িয়া ভাষা এবং সংস্কৃতি জানেন না,যিনি ওড়িশার সবগুলি জেলার নাম জানেন না, তিনি কীভাবে ওড়িশাবাসীর সাথে একাত্ম হবেন? ওড়িশাবাসীর সমস্যার সমাধান করবেন?এইভাবেই মোদি ওড়িশাবাসীর মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির সেন্টিমেন্ট উস্কে দিচ্ছেন।
এটা ঠিক যে ছোটবেলায় দুন স্কুল, তারপর সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের প্রাক্তনী নবীন পট্টনায়কের মা হচ্ছেন পাঞ্জাবী।ছোটবেলা থেকে ইংরেজি এবং হিন্দির পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন।ফলে ওড়িশার দীর্ঘদিনের মুখ্যমন্ত্রী আজও ওড়িয়া ভাষা রপ্ত করতে পারেননি। আজও তিনি ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে হাতে গোনা কিছু ওড়িয়া বাক্য বলতে পারেন।ওড়িয়া অক্ষরও বিশেষ চিনে উঠতে পারেননি তিনি। জনসভায় বলতে উঠে আজও তাকে চোখ রাখতে হয় কাগজে। তাতে রোমান হরফে লেখা থাকে ওড়িয়া বক্তৃতা।তার বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ।এখানেই শেষ নয়,বয়সের ভারে ন্যূজ এবং অসুস্থ নবীন বছর তিনেক ধরে তার সমস্ত কাজকর্মের দায়িত্ব সঁপে দিয়েছেন তারই প্রাক্তন একান্ত সচিব (আইএএস) ভি কে পান্ডিয়ানের হাতে।
তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ভি কে পান্ডিয়ানই এখন বকলমে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।এমনটাই অভিযোগ। নবীনের নামে যাবতীয় কাজকর্ম এবং সিদ্ধান্ত পান্ডিয়ানই নেন। ওড়িশার ভোটে এবার এটাই সবথেকে বড় ইস্যু।একটা বড় অংশের জনগণের মধ্যেও এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিজেপি কি এই ক্ষোভের সুবিধা শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলতে পারবে?কেননা,ওড়িশার উন্নয়নে নবীন পট্টনায়েক একটা পৃথক ইমেজ তৈরি করেছেন।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।যেমন গুজরাট নিয়ে মোদি বড়াই করতেন।ঠিক তেমনি ওড়িশার উন্নয়নের প্রশ্নে নবীন একটা জায়গা করে নিয়েছেন।সেই ইমেজে বিজেপি কতটা চিড় ধরাতে পারবে?তার উপরই নির্ভর করবে বিজেপির সাফল্য।তবে ওড়িশাবাসী যে ক্রমশ শঙ্খ ছেড়ে পদ্মে ঝুঁকছে তার আভাস কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে।এই ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ তুলে ধরলে মনে হয় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
গত বছর ওড়িশায় দুটি বিধানসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।এই দুটি আসন হলো ধামনগর ও পদমপুর।ধামনগর কেন্দ্রটি আগে বিজেপির হাতেই ছিল। উপনির্বাচনে বিজেপি ফের আরও বেশি ভোটে ধামনগর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে।শুধু তাই নয়, পদমপুর কেন্দ্রে ২০১৯ বিধানসভায় যে ভোট পেয়েছিল,
উপনির্বাচনে বিজেপি ওই কেন্দ্রে ভোট আরও বাড়িয়েছে।এই দুটি বিধানসভার উপনির্বাচনের ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মহিলাদের ভোটে ভাঙন ধরিয়েছে
বিজেপি।মহিলাদের ভোটই ছিল নবীনের সমর্থনের মূল ভিত্তি।এখন তা থেকে একাংশ সরে যাচ্ছে বিজেপির দিকে।তাছাড়া ওই উপনির্বাচনের ফল মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের রাজ্যব্যাপী অপরাজেয় ভাবমূর্তিকে ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই সময়ে ওড়িশার রাজনীতিতে বিজেপি বিকল্প শক্তিশালী বিরোধী হিসাবে উঠে এসেছে।অনেকেই মনে করছেন বিজেপি ক্ষমতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে।উন্নয়নের রাজনীতির কর্মসূচিতে নতুন দিশা নিয়ে এসেছে বিজেপি।একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প সেই দিশাকে আরও জোরদার করেছে বলে মনে করছে অনেকে।যা রাজ্যের রাজনৈতিক পটভূমিকে ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে।রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারণাকে সামনে আনছে বিজেপি,সেখানে স্থানীয় স্তরের ছোট ছোট চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে যুক্ত হচ্ছে উন্নয়নের অতিকায় উদ্যোগ।যেমন উপকূলে মহাসড়ক, রেল, পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্প ইত্যাদি। অন্যদিকে নবীনের বিজেডি স্থানীয় স্তরের মৌলিক প্রয়োজনগুলি মেটানোর আশ্বাস দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বড় মাপের কোনও স্বপ্ন তৈরি কিংবা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের কোনও দিশা দেখাতে পারছে না। এটাই বিজেপিকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।শুধু তাই নয়,ওড়িয়া পরিচিতির বোধ,ওড়িশাবাসী বলে গৌরবের অনুভব তৈরি করা,অর্থাৎ ওড়িশায় রাজনৈতিক উত্থানের পথে এগোনোর কৌশল হিসাবে বিজেপি বেছে নিয়েছে গৌরব, আত্মপ্রত্যয় এবং উন্নয়নের উচ্চাশা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর আস্থা এবং মোদির গ্যারান্টিও ওড়িশাতে পদ্ম শিবিরের জয়ের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত তিনদিন ওড়িশায় নানা জায়গায় ঘুরে, নানা স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, ওড়িশায় এখন দু’ধরনের রাজনীতি চলছে। একদিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ভাবমূর্তি নির্ভর রাজনীতি, অন্যদিকে সাংগঠনিক শক্তি ও উন্নয়নের নতুন ধারণার রাজনীতি। ফলে বর্তমানে ওড়িশায় বিজেপি যে নবীন পট্টনায়েক সরকারের এক শক্তিশালী বিকল্প হয়ে দেখা দিয়েছে তা একেবারে স্পষ্ট।তবে নবীন পট্টনায়কও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন।ক্ষমতা ধরে রাখতে আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই ২০২৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতার গতি কোন্দিকে যায়?তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।

FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp
Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

জুলাই মাসে হবে শিলান্যাস,জিরানীয়ায় ৮০ কানি জমিতে তৈরি হবে অত্যাধুনিক পার্ক: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জিরানীয়া মহকুমা এমএন কলোনিকে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।…

14 hours ago

সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কথোপকথন, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সামগ্রিকভাবে রাজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা…

15 hours ago

কৃষির উন্নয়নে নতুন রূপরেখা রাজ্যের: রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকারের জল বিভাজিকা প্রকল্পের মধ্য দিয়ে পূর্ব নোয়াগাঁও গ্রামটিকে কৃষির উন্নয়নের স্তরে…

15 hours ago

বেকার নিয়ে খেলা!!

ভয়ংকর হারে রাজ্যে বাড়ছে বেকার। সেই তুলনায় নিয়োগ নেই।এই অভিযোগ বোম ছাত্র সংগঠনের।ভয়ংকর তথ্য তুলে…

15 hours ago

উড়িয়ে দেওয়া হবে মুম্বই বিমানবন্দর, তাজহোটেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে তাজ হোটেল এবং মুম্বইয়ের শিবাজি মহারাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর!…

16 hours ago

ফের হাজির কোভিড ১৯, সিঙ্গাপুর-হংকং বিপর্যস্ত!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হংকং ও সিঙ্গাপুর সহ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউ দেখা দিয়েছে।…

17 hours ago