দিল্লী বৈঠকে পূর্বোত্তরের চার শীর্ষ নেতৃত্ব,জনজাতিদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ঐক্যমঞ্চ, শীঘ্রই নয়া দল ঘোষণা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জনজাতি জনসমাজের নয়া দিশার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ গড়লেন পূর্বোত্তরের চার রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় জনজাতি নেতৃত্ব। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হলেও নর্থ ইস্টের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে জনজাতি মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মঞ্চ। শুধু তাই নয় ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’ গড়তে নয়া রাজনৈতিক দল গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিলেন তারা। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যেই নতুন দলের ঘোষণা করবে ঐক্যবদ্ধমঞ্চ। পূর্বোত্তরের চার রাজ্যের জনজাতি শীর্ষনেতৃত্বের মধ্যে একজন হলেন বিজেপির জোট শরিক মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। বিজেপি জোট শরিক ত্রিপুরা থেকে তিপ্রা মথা দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। নাগাল্যান্ডের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র এমএন লুমো কিকন। আসামের পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল লাংথাসা। মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশে, মিজোরাম এবং সিকিমের জনজাতি রাজনৈতিক দলও এই মঞ্চে সামিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার নয়াদিল্লীর কনস্টিটিউশন ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এনপিপি পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা আরও জানান, উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলির সাথে আমাদের আলোচনা হয়ে গিয়েছে।খুব শীঘ্রই নয়া রাজনৈতিক দল গঠিত হবে ।আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে নর্থ ইস্টের ৮ টি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সাথে বৈঠকের মাধ্যমেই নয়া রাজনৈতিক দল গঠন করব আমরা। তিনি জানান, নর্থইস্টের জাতি- জনজাতি জনসমাজের একটাই দাবি- সংবিধানিক
অধিকার। বর্তমানে আমরা পৃথক রাজনৈতিক ব্যানারে আন্দোলন করছি। আমাদের অধিকারের দাবি তাই সঠিকভাবে নয়াদিল্লীতে যাচ্ছে না। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের দাবি দেশবাসীর কাছে নিয়ে যাব। জনজাতি মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য আমাদের এই পথেই যেতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হবে একটি, আমাদের পতাকা থাকবে একটি এবং আমাদের প্রতিটি চিহ্ন থাকবে একটি। আগামী দিনে আমরা নির্বাচন ও প্রতিনিধি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। উত্তরপূর্ব ভারতের ঐক্য সম্প্রীতি দেখতে পারবেন সমগ্র দেশবাসী। তৈরি থাকুন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ বলেন, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে। এই সবকিছু পেছনে ফেলে আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের জনজাতি মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় একটি নয়া রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কাছে জাতি আগে দল পরে। এই বিষয়টিকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। বর্তমান রাজনৈতিক মঞ্চে নর্থইস্টের বিভিন্ন রাজ্যের নয়জন প্রতিনিধি শামিল হয়েছেন।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার, দেশের বিরোধী দল সহ কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করা হয়নি। আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের পদক্ষেপ হবে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাইছি না। এনপিপি এবং তিপ্রা মথা দুটি রাজনৈতিক দলই বিজেপি জোট শরিক হলেও সাংবিধানিক অধিকার আদায়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরও আমাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের মতো অধিকার চাইতে হচ্ছে। এর থেকে বেদনাদায়ক কী হতে পারে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হলেও সঠিক সাহায্য পাচ্ছেন না। অনেক হয়েছে, এখন রুখে দাঁড়াতে হবে।তিনি বলেন, ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন। এডিসিকে সরাসরি অর্থ প্রদান। ভাষার অধিকার, ভূমির অধিকার, আর্থ সামাজিক অধিকার, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, উইমেন্স কলেজ, পানীয় জলের সমস্যা নিরসন, বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি-নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ সমস্যার নিরসন, হাসপাতাল সহ আর্টিকেল ২৩-তে অনুমোদন প্রদান। নর্থ ইস্টের জনজাতি মানুষ এই অধিকারগুলিই দাবি করছেন।তার দাবি, পৃথকভাবে এই দাবিগুলি আদায়ে আমাদের গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন এতদিন হয়েছে। হয়তো তাই আমরা উপেক্ষিত। আর ভুল হবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে পথে নামব আমরা। পূর্ব উত্তর ভারতের সব রাজ্যের পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচিও হবে।নয়া রাজনৈতিক মঞ্চে এবং নয়া রাজনৈতিক দলে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি, সাংবাদিক সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে শামিলের আহ্বান তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।ত্রিপুরা প্রসঙ্গে তার দাবি, রাজ্যে ১০ বছর ধরে ভিলেজ কাউন্সিল নির্বাচন হচ্ছে না। ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের ৩৮ টি বিলে অনুমোদন-অধিকার আদায়ে এবং ভিসি নির্বাচনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে হচ্ছে। এর থেকেই অনুমেয় জনজাতি জনসমাজ সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত। ত্রিপুরা থেকে বিকে রাংখল, মণিপুরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিম চন্দ্র, নাগাল্যান্ড থেকে প্রাক্তন সাংসদ লোরহু সহ পূর্ব উত্তরের অন্যান্য নেতৃত্বরা সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Dainik Digital: