দায়িত্বে চরম গাফিলতি পুলিশ ও ডাক্তারের!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সম্প্রতি উদয়পুরে ইংরেজি শিক্ষক অভিজিৎ দে হত্যাকাণ্ডে রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।প্রশ্ন উঠছে এই কারণে যে, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার যাবতীয় প্রচেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।তদন্তের গতিপ্রকৃতি এমনভাবে এগোচ্ছে,যাতে অভিযুক্তরা সহজে ছাড়া পেয়ে যায়।শুধু তাই নয়, শিক্ষক অভিজিৎ দে-কে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যারা মারধর করেছে, তারাই কেবল অভিযুক্ত নয়, এই হত্যাকাণ্ডে সমানভাবে দায়ী আর কে পুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক (আইও) এবং গোমতী জেলা হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসক।যিনি আট আগষ্ট হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে চরম গাফিলতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, রহস্যজনকভাবে তারা তদন্তের বাইরে রয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।অভিজিৎ দে একজন শিক্ষক ছিলেন।তিনি যদি কোনও অপরাধ করে থাকেন, তার জন্য আইন আদালত রয়েছে।সেই পথে না হেঁটে একজনকে বাড়িতে ডেকে এনে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়েছে শাসক দলের নেতা এবং শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।অভিযোগ, তাকে শাসকদলের নেতা শঙ্কর কর্মকার ওরফে শঙ্কুর বাড়িতে দুই দফা বেদম মারধর করা হয়েছে।এমনকী প্রয়াত শিক্ষকের স্ত্রীকে ডেকে এনে স্ত্রীর সামনেও অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা তিন দপ্তরই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।তা সত্ত্বেও জনৈক চিকিৎসক এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে।কেননা বেদম মারধর করার পর শিক্ষক অভিজিৎ দে-কে যখন পুলিশ প্রথমে থানায় এবং থানা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তার কি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেন? এই প্রশ্ন উঠা তো স্বাভাবিক। এদিন সারারাত এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় থানার লকআপে পড়ে থাকলেন একজন শিক্ষক।অথচ পুলিশের নজরেও আসেনি তার অসুস্থতা।প্রশ্ন উঠেছে, ওই দিন রাতে আর কে পুর থানার লকআপেই যদি শিক্ষক অভিজিৎ দে’র মৃত্যু হতো?তখন এর দায় কে নিতো?এই ঘটনা তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।এই ব্যাপারে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে স্বত:প্রণোদিত মামলা গ্রহণ করে বিষয়টি তদন্ত করা জরুরি বলে মনে করছে অনেকে।
সারা রাত বিনা চিকিৎসায় থানার লকআপে পড়ে থেকে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক অভিজিৎ
দে।এই অবস্থাতেই পুলিশ পরদিন নয় আগষ্ট শিক্ষক অভিজিৎ দে-কে উদয়পুর আদালতে হাজির করে। আদালতেই অভিজিৎ দে রক্তবমি করেন।আদালত থেকে তড়িঘড়ি তাকে গোমতী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দশ আগষ্ট জিবি হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিক্ষক অভিজিৎ দের।সেখান থেকে ময়নাতদন্ত না করে মৃতদেহ তুলে দেয় জিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।উদয়পুর শিক্ষকের নিজ বাড়িতে মৃতদেহ আনা হলে তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে সবাই অবাক হয়ে পড়ে।সেখান থেকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে মৃতদেহ ফের গোমতী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য।পরে ময়নাতদন্ত শেষ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের হাতে তুলে দেয় শিক্ষকের মৃতদেহ।এইদিন মৃত শিক্ষক অভিজিৎ দের স্ত্রী মিত্র দাস সর্দার দে রাধাকিশোরপুর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে খুনের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হল- শঙ্কর কর্মকার (শঙ্কু), জীবন সাহা, জয়ন্ত সাহা, বিমল সাহা। প্রত্যেকের বাড়ি পোল্ট্রি রোড এলাকায়।পুলিশ একটি পরিকল্পিতভাবে খুনের মামলা হাতে নিয়ে পুনরায় তদন্তে নামে।
নানা জল্পনা, সমালোচনার পর এই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শঙ্কর কর্মকার (শঙ্কু) কে পুলিশ আটক করেছে। এর আগে জয়ন্ত সাহাকে পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করে।অথচ মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আদালতে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করেনি। তাই আদালত জয়ন্ত সাহাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠায়। অপর দিকে হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শঙ্কর কর্মকারকে পুলিশ আটক করে মুখ বাঁচাতে আদালতে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করে। পুলিশের ‘আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত শঙ্কর কর্মকারকে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করে। এখনও বাকি দুই আসামিকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। পুলিশের তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চাপা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও পুলিশি এবং চিকিৎসকের ভূমিকা নিয়ে সরব। কংগ্রেস শিক্ষক অভিজিৎ দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে যুক্ত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে থানা ঘেরাও করেছে।চাপের মুখে দুই আসামিকে পুলিশ আটক করতে বাধ্য হয়।এদিকে শুক্রবার দুপুরে গোমতী জেলা পুলিশ সুপার অফিস ঘেরাও করে কংগ্রেস।এরপর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।খুন কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়। এদিকে টেট টিচার গোমতী জেলা কমিটি শিক্ষক অভিজিৎ দের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উদয়পুরে প্রতিবাদ সভা করে।গোটা শিক্ষক সমাজ – এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপি গোমতী জেলা অফিসে জেলা কমিটির সহসভাপতি তথা বিধায়ক জিতেন মজুমদার এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কাজে শাসক দল বাধা দিচ্ছে, এই অভিযোগকে খণ্ডন করে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, বিজেপি দল ও সরকার কোনওভাবেই পুলিশের কাজে বাধা দেয় না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পলিশকে করা বার্তা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে, অভিজিৎ দের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে?শিক্ষক অভিজিৎ দে হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার শেষ পর্যন্ত হবে তো?এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।তাছাড়া, এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শাসক দলের নেতার পরিবার বিরুদ্ধে ও বহু
অভিযোগ ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে।

Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

33 mins ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

1 hour ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

3 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

3 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

4 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

5 hours ago