অনলাইন প্রতিনিধি :- দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম টাউন হলে শুক্রবার ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একসাথে মোট ১৯টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। রিমোটে বোতাম টিপে কার্যত ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পগুলির সূচনা করেন তিনি। এরপরই তিনি বলেন, রাজ্যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। এমন আরও বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধনের প্রহর গুনছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ফায়ার স্টেশন, অফিস গৃহ পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে উন্নয়নের লক্ষ্যে। এদিক থেকে এ বছর জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৬১২ কোটি টাকার উন্ননয়মূলক কাজের উদ্বোধন করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়ের নতুন পাকা বাড়ি, বিদ্যালয় সংস্কার, অফিস নির্মাণ, স্বাস্থ্য ভবন ইত্যাদি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শিক্ষায়। রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নেও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তার কথায়, মোট ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে জনজাতিদের উন্নয়নে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নয়ন তুলে ধরতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নয়টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগ চালু করা হয়েছে এখন। এছাড়াও কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এদিন বলেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে ১৯ হাজার সরকারী চাকরি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আউটসোর্সিং হিসেবে আরও অন্তত পাঁচ হাজারের কাছাকাছি চাকরি প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, রাজ্যে ৫৬ হাজার স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে।
লাখপতি দিদি, ড্রোন ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। আনারস ও ফল চাষ, রাবার বাগান, মৎস্যচাষ, পশুপালন, পর্যটন এই সব ক্ষেত্রকেও গুরুত্ব দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দীপক দত্ত, সাক্রম নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন রমা পোদ্দার দে, এমডিসি কংজাং মগ, বিশিষ্ট সমাজসেবী দীপায়ন চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক শংকর রায়, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা মহম্মদ সাজ্জাদ পি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, দক্ষিণ জেলার উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন। এখানকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধন করায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এদিন সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাসের নবনির্মিত পাকা ভবনেরও দ্বারোদঘাটন করেন। এই অনুষ্ঠানে দুজন নাগরিককে আয়ুষ্মান কার্ড এবং দুজন নতুন ভোটারের হাতে সচিত্র পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে মোদি সরকারের ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে শান্তিরবাজারে অটল স্মৃতি মার্কেটে আয়োজিত এক সভায় এদিন বিকশিত ভারতের অমৃতকাল, সেবা, সুশাসন ও গরিব কল্যাণের এগারো বছর সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত কোন দিকে যাবে এর রোড ম্যাপ তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মডার্ন ইন্ডিয়ার রূপ রচনা হয়েছে। গুজরাট মোদির নেতৃত্বে অনেক এগিয়েছে। সেই মডেল ভারতে প্রয়োগ হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে অনেক জাতপাতের রাজনীতি হয়েছে। মোদি বলেছেন, শুধু চারটি জাত থাকবে। গরিব, কৃষক, যুবক, মহিলা। তাদের উন্নতি হলে দেশ এগিয়ে যাবে। সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। নরেন্দ্র মোদি অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন। দেশে একটি মজবুত ফাউণ্ডেশন তথা ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ। মোদির কার্যকাল ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিভিন্ন সাফল্য এবং জনমুখী কর্মসূচিগুলি সবিস্তারে বর্ণনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। তিনি বলেন, পূর্বোত্তরের উন্নয়নে মোদিই প্রথম অ্যাক্ট ইস্ট নীতি গ্রহণ করেন। যার জেরে জিডিপি মাথাপিছু আয়ে ত্রিপুরা পূর্বোত্তরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
বিগত বাম সরকারের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওদের শাসনে দুর্নীতি আর খুন খারাপি শিল্পে পরিণত হয়েছিল। শুধু দক্ষিণ জেলায় ৬৯ জন খুন হয়েছেন।সরকার বদলের পর কাউকে প্রাণ দিতে হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোদিজির নেতৃত্বে সরকার খুবই রেসপনসিভ। রিফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম-এর সরকার। অর্থনীতি ১১ নম্বর স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। মোদির প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই সরকার অন্য সরকারগুলির মতো রাজনীতি করলাম, পরিকল্পনা করলাম এমন নয়। যা বলে তাই করে। ২৫ মিনিটে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে। তৃতীয় কারো উপদেশ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন, উপদেশ দিতে আসবেন না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পার্টনার হিসেবে লড়াই করলে আসুন।
প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত বিমা ও মুখ্যমন্ত্রী বিমা প্রকল্প নিয়ে সন্তোষ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই যোজনা সারা পৃথিবীর মধ্যে কোথাও নেই।
সভায় এর আগে ভাষণ রাখেন বিধায়িকা স্বপ্না মজুমদার, বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, আইটি ইনচার্জ চন্দন দেবনাথ, দলের জেলা সভাপতি দ্বৈপায়ন চৌধুরী, প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা প্রমুখ।