থারুর কি বিজেপির পথে

কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ শশী থারুর কি বিজেপির দিকে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন?শশী থারুরের ইদানীং কিছু কর্মকাণ্ড সেই জল্পনাকে উসকে দিয়েছে তা বলাই যায়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহার জয়ের পর দিল্লীতে দলের সদর দপ্তরে বিজয় সমাবেশে এসে মন্তব্য করেছেন যে, কংগ্রেস হয়তো আগামীতে ২ টুকরো হতে পারে। তাহলে কি শশীকে দিয়েই বিজেপির এই প্ল্যান রয়েছে? তবে সময়ই এর জবাব দেবে তা নে বলা যায়।
শশী থারুর একজন কূটনীতিক ছিলেন। একসময় তিনি রাষ্ট্রসংঘে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব পদে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। কেন্দ্রে যেমন ইউপিএ সরকার ক্ষমতাসীন ছিলো সে সময় দেশে ফিরে আসেন। কেরলের তিরবনন্তপুরম থেকে ভোটে দাঁড়ান। জিতে সাংসদ হন। পরে কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ইউপিএ সরকার থাকাকালীন তার স্ত্রী সুনন্দা পুস্করের দিল্লীতে একটি হোটেলে রহস্যমৃত্যু হয়। এনিয়ে বহু জলঘোলাও হয়। আবার পরবর্তী সময় তা চাপাও পড়ে যায়।
মল্লিকার্জুন খাড়গে যখন কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সে সময় তার বিপক্ষে ভোেট দাড়িয়েছিলেন এই শশী থারুর। কংগ্রেস একটি গণতান্ত্রিক দল হওয়ায়ই এটি সম্ভব হয়েছিলো। যদিও নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটই পেয়েছিলেন। জয়ী হন মল্লিকার্জুন খাড়গে। শশী থারুর সোনিয়া-মনমোহন জমানায়ই কেন্দ্রে মন্ত্রী হন। সোনিয়ার সাথে তার সম্পর্কে মন্দ নয়। কিন্তু রাহুল গান্ধীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো নয়। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা-১, ভারত যাত্রা- ২ কিংবা পরবর্তীতে বিরোধী দলনেতা হলেও সেই সম্পর্কের উন্নতি হয়নি।


ইদানীংকালে অপারেশন সিন্দুর পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার দেশে দেশে যে সর্বদলীয় সাংসদ প্রতিনিধি দলকে বিশ্বের বহু দেশে পাঠিয়েছেন এর মধ্যে একটি প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। শশী থারুর বিদেশে গিয়ে অপারেশন সিন্দুর নিয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন এবং ভারত সরকারের বেজায় প্রশংসাও শোনা যায় শশীর গলায়। শুধু তাই নয়, সংসদে অপারেশন সিন্দুর নিয়ে বিতর্কের সময় কংগ্রেসের তরফে শশীকে বলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শশী থারুর কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে রাজি নয়।তাই সংসদে তিনি বলেননি।
এর উপর কেরল কংগ্রেসের নানা কাজকর্ম নিয়েও শশী মুখ খোলেন, কংগ্রেস সিপিএমের উপর বেশ নরম মনোভাব পোষণ করবে এ মর্মেও সরব হন শশী।
সম্প্রতি পরিবারতন্ত্র নিয়ে একটি বই লিখেন শশী থারুরু। সেই বইয়ে নেহরু গান্ধী পরিবারকে নিয়ে পরোক্ষে খোঁচা দেন শশী। এককথায় গত কয়েক বছর যাবৎই একদিকে কংগ্রেসের মধ্যে বেসুরো ঠেকছেন শশী অন্যদিকে অতি সন্তর্পণে বিজেপির সাথে সুমধুর সম্পর্ক রেখে চলেছেন। যদিও কংগ্রেসে এ নিয়ে প্রকাশে কোন মন্তব্য করে আজ পর্যন্ত।
অতি সম্প্রতি বিহার ভোটে কংগ্রেস সহ বিরোধী জোটের ভারী বিপর্যয়ের পর দিল্লীতে এসআইআর নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলো কংগ্রেস। যে ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বর্তমানে এসআইআর চলছে সে সমস্ত রাজ্যের এসআইআর প্রক্রিয়া পর্যালোচনার জন্য সিডব্লুসি’র সমস্ত সদস্য সহ কংগ্রেস পদাধিকারীদের বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন শশী থারুর নিজেও।
কিন্তু শশী থারুর ‘অসুস্থ’ বলে সেই বৈঠক এড়িয়ে যান। অথচ এদিন সকালেই অসুস্থ শরীরে মোদির এক সভায় আগাগোড়া হাজির থেকেছেন শশী। শুধু তাই নয়, মোদির সভার ছবি পোস্ট করে নরেন্দ্র মোদির ভাষণের বেজায় প্রশংসাও করেন শশী। এখানেই কংগ্রেসেরে খটকা লেগেছে। তাহলে কি শশী বিজেপির জুতোয় পা গলাতে যাচ্ছে? গত কয়েক মাস ধরেই শশী থারুর বেসুরো। এবার কি তাহলে বিজেপির দিকে পা বাড়াবেন শশী? প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের ভাঙনের যে ইঙ্গিত করেছিলেন তা কি শশী থারুর দিয়েই শুরু হচ্ছে? দিল্লীর রাজনৈতিক অলিন্দের দিকে লক্ষ্য রাখতেই হবে তার জন্য।

Dainik Digital: