“টাকা নাও, ভোট দাও”

রাজনীতিতে কি এখন শুধু ভোটে জেতাটাই মুখ্য হয়ে গিয়েছে?ভোটে জিতে গিয়ে ক্ষমতার আস্ফালন আর লুটপাট চালানোর জন্যই এত্ত হাঙ্গামা, মারদাঙ্গা, হামলা হুজ্জতি ইত্যাদি। এখনকার সময় তাই যেন রাজনেতাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে গেছে।অন্তত সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি তাই-ই। সদ্য সমাপ্ত বিহার নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে টাকা নাও আর ভোট দাও। এর আগে মহারাষ্ট্রে, আর মধ্যপ্রদেশেও একই চিত্র দেখা গেছে। মহিলাদের জন্য যোজনা চালু করে রাজ্য সরকারগুলি ভোটে ডিভিডেন্ট পেয়েছে। একই চিত্র পশ্চিমবঙ্গেও দেখা গেছে মহিলাদের জন্য যোজনা মমতাকে ভোটে ডিভিডেন্ট দিয়েছে। তাহলে কি বলা যায় জনগণের টাকা, সাধারণ মানুষের টাকা দিয়ে শাসকদল ভোট কিনছে। পাঁচ বছরের জন্য। এটাই কি গণতন্ত্র? এই গণতন্ত্রের জন্য আমাদের দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমাদের বীর আন্দোলনকারীরা শহীদ হয়েছিলেন। আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে গণতন্ত্রের কথা ‘হাস্যকর’ একটা কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজের বেলায় করছে ঠিক এর উল্টো। সুতরাং গণতন্ত্র দরকার শুধু গদি বা চেয়ারে বসার জন্যই। রাজনৈতিক দলগুলি এখন তাই মনে করে গণতন্ত্রকে নিয়ে। একবার চেয়ারে বসে গেলে সেই গণতন্ত্রকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই এখন রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান কাজ। সাধারণ মানুষ হয়ে গেছে এখন পুতুল। যেভাবে শাসক নাচাবে মানুষ সেভাবেই নাচছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেখা গেছে যে, ওই রাজ্যে হঠাৎ করেই এসআইআর করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হল। এসআইআর এত তড়িঘড়ি করা হয়েছে যে তাতে মনে হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন শুধু নাম বাদ দেবার জন্যই এসআইআরটা করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ কি তাই? বরং নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে কোনো ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায় তা সুনিশ্চিত করা।কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই কাজটি করল কই? সুপ্রিম কোর্টে মামলা মোকদ্দমার পর কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত হল ঠিকই কিন্তু তারপরও দেখা গেছে বহু ভোটারের নামই নেই ভোটার লিস্টে। বিরোধীর চিৎকার করলেও তাদের কথা শুনা হয়নি। এটা কি গণতন্ত্রের নমুনা দ্বিতীয়ত, ভোট ঘোষণার আগে বিহারে মহিলাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নামে একটা যোজনা চালু করে দেওয়া হয়েছে তাতে প্রায় দেত কোটি মহিলাকে এককালীন দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে ঘোষণ দেওয়া হয়। দেখা গেলো ভোট প্রক্রিয়া চলছে,আদর্শ নির্বাচন আচরণবিধি লাগু রয়েছে অন্যদিকে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউনে ভোটের দিন, ভোটের আগের দিনও দশ হাজার টাকা করে ঢুকেছে। বিরোধীরা চিৎকার করলেও নির্বাচন কমিশন এতে কর্ণপাত করেনি। ফলে এবার রেকর্ড পরিমাণ মহিলাদের ভোটের লাইনে দেখা যায়। মহিলাদের ভোটদান ছিল বেশি। এর ফল হাতেনাতে পেয়েছে শাসকশিবির। অর্থাৎ মহিলাদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিতেই মহিলারাও উজার করে এনডিএকে ভোট দিয়ে ভোটের বাক্স ভরিয়ে দিয়েছে। তাই শাসকশিবির এত্ত বিপুল জয় পেয়েছে। একই কায়দায় বিজেপি জোট মধ্যপ্রদেশে লাডনি বহনা যোজনায় ফায়দা পেয়েছে।মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্র লড়কি বহিন যোজনার সুফল পেয়েছে বিজেপি। এই সমস্ত “টাকা নাও ভোট দাও” প্রকল্প চালু রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তামিলনাড়ু, ওড়িশা, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ,দিল্লী, ছত্তিশগড়, আসাম ইত্যাদি রাজ্যে। দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই টাকা দেবার যোজনা চালু রয়েছে। অর্থাৎ গোটা দেশই এই পদ্ধতিতে চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা এই খাতে মানুষের মধ্যে বিলানো হচ্ছে। শুধু ভোটের লক্ষ্যে।এই টাকা কার?সমস্ত
সাধারণ মানুষের করের টাকা। এই টাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি কতকিছুই না করা যেত।না ভোট কিনতে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যে এই পন্থা নেওয়া হচ্ছে।এটাই এ দেশের গণতন্ত্র। গণতন্ত্রও এভাবে বিক্রি হয়। মানুষ যেখানে পণ্য হয়ে গেছে। মানুষকে কিনে নিয়ে ভোট আদায় করা হচ্ছে। এই মেকি গণতন্ত্রের জন্যই রাজনৈতিক নেতারা দিনরাত এক করছেন।ভোটের সময় কত না কুম্ভীরাশ্রু।ভোট ফুরোলেই সবই যেন ‘জুমলা’।

Dainik Digital: