অনলাইন প্রতিনিধি:-একদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার গুজরাটের দেদিয়াপাড়া (নর্মদা) থেকে জনজাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে জনজাতিদের উদ্দেশ্যে প্রায় ৭,৭০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বেশকিছু নয়া উদ্যোগেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অন্যদিকে ত্রিপুরা স্বশাসিত এলাকা জেলা পরিষদের প্রধান কার্যালয় খুমুলুঙের খুম্পুই একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা-ও এ দিন জনজাতিদের সার্বিক বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধিক সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্টই তৎপর বলে এ দিন জনজাতীয় গৌরব দিবসের অনুষ্ঠান থেকে স্পষ্টতই জানান মুখ্যমন্ত্রী।
জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল অভয়নগরে কলেজপড়ুয়া ছাত্রদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বয়েজ হস্টেল নির্মাণ করা। এছাড়াও ছাত্রাবাসে স্মার্ট কামের সুবিধা বৃতি করা মৃত ৫০০টি বৈদ্যুতিক অটো প্রদান করা এবং এমন আরও বহু প্যাকেজ। শুধুমাত্র খুমুলুঙে নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন মহকুমা, জেলাভেদেও জনজাতীয় গৌরব দিবসটি পালন করা হয়। খুমুলুঙে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠান থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার জনজাতি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়ন ছাড়া রাজ্যের অগ্রগতিও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে ভগবান বীরসা মুন্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।আজ তার অবদানের কথা মনে রাখতে গিয়ে তার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ নভেম্বর দিনটিকে জনজাতীয় গৌরব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন,ভগবান বীরসা মুন্ডাকে একজন কিংবদন্তি নেতা বলা হয়। জনজাতীয় গৌরব দিবসে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনজাতি সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে যেমন সম্মান জানানো হচ্ছে তেমনি জনজাতি
অধ্যুষিত এলাকার আর্থ সামাজিক
মানোন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে
সরকার। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
বলেন, রাজ্য সরকার জনজাতি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে
সচেষ্ট। এরই ফলস্বরূপ ত্রিপুরা রাজ্য
ইতিমধ্যেই তিনটি জাতীয় পুরস্কার
অর্জন করেছে।পিএম জনমন,ধরতি আভা জন ভাগীদারী অভিযান বাস্তবায়নে সেরা পারফর্মিং রাজ্য হিসেবে দুটি পুরস্কার লাভ করেছে ত্রিপুরা। এছাড়াও পিএম জনমন বাস্তবায়নে দেশের মধ্যে সেরা পারফর্মিং জেলা হিসেবে উত্তর ত্রিপুরা জেলা পুরস্কৃত হয়েছে। কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক পিএম জনমন প্রকল্পে প্রায় ৫০টি মাল্টিপারপাস সেন্টার স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতিদের স্বার্থে সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে জনজাতি ছাত্রাবাসগুলিতে বর্তমান আসনসংখ্যা যেখানে ৩৪,০০০ রয়েছে তা বৃদ্ধি করে ৩৬,৭০০ করা হবে। এছাড়াও আবাসিক বৃত্তি আগামী ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে বাড়িয়ে মাথাপিছু ১০০ টাকা করা হবে বলে তিনি জানান। এটি বর্তমানে ৮০ টাকা রয়েছে। এ জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে। এ দিন তিনি অভয়নগরে কলেজপড়ুয়া ছাত্রদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বয়েজ হস্টেল নির্মাণ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। তিনি জানান, এ বছর এনজিও পরিচালিত ছাত্রাবাসগুলিতেও ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও জনজাতি ছাত্রাবাসগুলিতে স্মার্ট ক্লাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করে করা হবে ১৭০টি। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা দেন “মুখ্যমন্ত্রী ট্রাইব্যাল ডেভেলপমেন্ট মিশন”র অধীনে ১৯ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় ৫০টি জনজাতি সরকারী হস্টেলে সৌরশক্তি ভিত্তিক জল পরিশোধন সহ কম্পোজিট সৌর ইউনিট স্থাপন করার কথা। এই মিশনের অধীনে জনজাতি বেকার যুবক যুবতীদের জন্য ৫০০টি বৈদ্যুতিক অটো বিতরণেরও ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য আর্থিক ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন, ইনসিউরেন্স ইত্যাদির জন্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এই মিশনের অধীনে ৩০ হাজার জনজাতি মহিলা তাঁতিকে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুতো বিতরণ করার ব্যবস্থার কথাও ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে এদিন উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মন্ত্রী শান্তনা চাকমা, মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মণ সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পুলিশ মহানির্দেশক অনুরাগ ধ্যানকর, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব কে শশীকুমার প্রমুখ। জনজাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে এ দিন জনজাতি অংশের হাজারো নৃত্যশিল্পী মামিতা নৃত্য সহ জনজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও প্রদর্শন করে। অনুষ্ঠানে ৪০ জন জনজাতি সমাজপতিকে সংবর্ধনা প্রদান এবং ক্রীড়া, শিল্পকলা, নৃত্য, সঙ্গীত, সামাজিক কাজ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য ১১ জন জনজাতি ব্যক্তিত্বকে পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি অংশের সমাজপতিদের সাথে মতবিনিময়ও করেন এই অনুষ্ঠানে।