অনলাইন প্রতিনিধি :- এবার ত্রিপুরা থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লীতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার নর্থ ইস্ট পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের অধীনে গোকুলনগর রাস্তারমাথা স্পোর্টস গ্রাউন্ডে ১৩২ কেভি গোকুলনগর সাবস্টেশনের উদ্বোধন করে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ এই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। এখন আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে
বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছি। এই ব্যাপারে দিল্লীতে আজই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এ নিয়ে বৈঠকে
বিস্তারিত আলোচনা হবে।পাশাপাশি, দেশের সমস্ত সরকারী দপ্তরকে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার মধ্যে আনা নিয়েও
এ দিন মন্ত্রী সাবস্টেশনের উদ্বোধন করে বলেন, এই সাবস্টেশন নির্মাণে মোট ৪৩.৯৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হল নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশালগড়, অফিস টিলা, সেন্ট্রাল জেল, গোলাঘাটি, মধুপুর, সেকেরকোট, ফুলতলি, বিক্রমনগর, কমলাসাগর সহ প্রায় ৪৮,৭৪০টি পরিবার উপকৃত হবে। মন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় আমরা গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। তবে গ্যাসের সরবরাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। আগে রাজ্যে ৭ লক্ষ ২১ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিলেন, আর বর্তমান সরকার আসার পব সাত বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ৩৮ হাজারে।
আধুনিকীরণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। আধুনিকতার পথে এগোতে হবে, তাহলেই আমরা উন্নতির দিকে যাবো, আর আমাদের সরকার সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আগে রাজ্যে ছিল ১২টি ১৩২ কেভি সাবস্টেশন, বর্তমানে তা বেড়ে ২১-এ দাঁড়িয়েছে। আরও ২টির কাজ চলছে। আগে ১৩২ কেভি লাইনের দৈর্ঘ্য ছিল ৪৮৪ কিমি, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৯৮৬ কিমি। আরও ১০২ সার্কিট কিমির কাজ চলছে। ২০১৮ সালের আগে ৪৪টি ৩৩ কেভি সাবস্টেশন ছিল, এখন সাত বছরে ৭৫টি স্থাপন হয়েছে। আরও ১৮টি নির্মাণের কাজ চলছে। আগে যেখানে মাত্র ৯৫ কিমি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কিমিতে। মন্ত্রী জানান, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় রুখিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র যেখানে ৬৩ মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে, সেখানে এখন মাত্র ১৯ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। গ্যাসের সীমিত সরবরাহের মধ্যেও উৎপাদন দ্বিগুণ করতে আমরা নতুন প্রযুক্তি আনছি। বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় ৯৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রুখিয়ায় কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। ধলাই জেলার ছামনুতে ৮০০ মেগাওয়াটের পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তার ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে। সূর্যমণিনগরের একটি ৪০০ কেভি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ।
আলোর উৎসব দীপাবলির আগে বহু প্রতীক্ষিত ১৩২ কেবি সাবস্টেশনের শুভউদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এ দিন এলাকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। কমলাসাগর বিধানসভার অন্তর্গত রাস্তার মাথাস্থিত পুরনো ৬৬ কেভি সাবস্টেশনের পাশেই গড়ে উঠেছে এই নবনির্মিত ১৩২ কেভি সাবস্টেশনটি। ফলে আগামী দিনগুলিতে বিশালগড় মহকুমার অধীন চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ৪৮ হাজার ৭৪০টি পরিবার অর্থাৎ প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা সুনিশ্চিত হয়ে গেল এই সাব-স্টেশন উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে। আসন্ন এডিসি নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে এ দিন হাজার হাজার জনগণের সামনে রাজ্য সরকারের গত সাত বছরের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরলেন মন্ত্রী রতনলাল নাথ। তিনি অন্যান্য চিরাচরিত উদ্বোধন অনুষ্ঠান থেকে অনেকটাই আলাদাভাবে এই অনুষ্ঠানটিকে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। পুরনো ৬৬ কেভি সাবস্টেশনটি ২০০৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদার চাপ সামলাতে বরাবরই হিমশিম খেতে হচ্ছিল এই সাবস্টেশনটিকে। ব্রেকার পুড়ে যাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই সাব-স্টেশনে।
পঞ্চমীর রাত থেকেই ট্রায়াল রান শুরু করা হয়েছিল এই সাবস্টেশনের। যা সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই আসন্ন আলোর উৎসব দীপাবলিতেও যেন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করা যায়, সেই লক্ষ্যেই শুক্রবার তা জনসাধারণের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। এই সাবস্টেশনটি সূর্যমণিনগর ও রুখিয়ার সাথে ডবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত। ফলে বিদ্যুৎ পরিবহণের ক্ষেত্রে এই সাবস্টেশনটির গুরুত্ব অনেক গুণ বেশি বলে জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রী। তাছাড়া দীর্ঘ বাম ও জোট সরকারের যৌথ মেয়াদকালে একটা সময় জরাজীর্ণ হয়ে পড়া রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমকে বর্তমান সরকার যেভাবে ঢেলে সাজানোর প্রয়াস জারি রেখেছে, তাতে আগামী প্রজন্মকে বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো ভাবনা চিন্তা করতে হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, ড্রোন টেকনোলজি ও সৌর বিদ্যুতের জন্য রূপটপ সোলার প্যানেল বসানোর কাজ চলছে জোর কদমে। তাই বিদ্যুৎ নিগমকে ঢেলে সাজাতে এবং আগামী ৫০ বছরে রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে যেসব যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে তার সুফল খুব শীঘ্রই রাজ্যবাসী পেতে শুরু করবে বলে জানান তিনি। এ দিনের অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, কমলাসাগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা অন্তরা সরকার দেব, সিপাহিজলা জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন অতসী দাস, জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক সুভাষ দত্ত, ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা সহ বিদ্যুৎ দপ্তরের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।