গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বাধা ডিঙিয়েই যেতে হবে ভোটকেন্দ্রেঃ মানিক!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের পর শুরু হবে নতুন সংগ্রাম। ১৬ ফেব্রুয়ারী ঐক্যবদ্ধ জনগণের ভোটে উদ্ধার হবে রাজ্যের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার। রাজ্যে যে শ্মশানের স্তব্ধতা রয়েছে তাকে পরিষ্কার করে নতুন ত্রিপুরা গড়তে হবে ২০১৮ সালে ক্ষণিকের ভুলে যে মানুষ চলে গিয়েছিল তারা ফের ফিরে আসছে। তারা বুঝেছে খাল কেটে কুমির এনেছে। বেশি করে সোনার ডিম পেতে গিয়ে ডিম পাড়া হাঁসটাকেই কেটে ফেলেছে। আগামী নির্বাচনের দিন ভোট ভুণ্ডুল করার চেষ্টা হলে রুখে দাঁড়ান। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। সবাই যাতে ভোট দিতে পারে তার জন্য সকলকে পথে নামতে হবে। ঘরে বসে হিসাব করলে চলবে না। নেতা-মন্ত্রীরা বসে নেই। রাতের অন্ধকারে হিংস্র হায়নার দল নানা চেষ্টা করবে। তাদের রুখে দেবার জন্য রাত জাগতে হবে। তাদের ছাড়া হবে না।জয় হাসিল করেই তবে থামতে হবে। আজ সোনামুড়া খেলারমাঠে সিপিএম ও কংগ্রেস দলের যৌথ নির্বাচনি সভায় একথাগুলি বলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন, রাজ্যে অশুভ শক্তির বিনাশে সিপিএম ও কংগ্রেস এক হয়ে নির্বাচনে লড়ছে। রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। রাজ্য থেকে বিজেপির অপশাসন দূর করার জন্য ঘুরিয়ে তিনি আহ্বান জানালেন যেখানে যাকে ভোট দিলে অত্যাচারী শাসনের অবসান হবে সেভাবেই ভোটদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে সিপিএমকে ভোট দেওয়া। রাজ্য থেকে দুঃশাসনের অবসান করানোর জন্য রাজ্যে যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোট হয়েছে তাকে জয়ী করার জন্য প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ভোটের কাণ্ডারি আখ্যায়িত করে বলেন, কীভাবে ভোট করা যায়। ভোটের পর সরকার গড়ার মতো অবস্থায় না থাকলেও কীভাবে সরকার গড়া যায় তার মাস্টার। ভয়ের আরও কারণ আছে। ২০১৮ সালে বিজেপি কীভাবে ক্ষমতায় এল। ভোট পেলো তার ব্যাখ্যাও তিনি দিলেন। আজকের সভায় ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিজেপি মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৮ সালে পঞ্চাশ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছে। কোথা থেকে এই ভোট এল, সেসময়ে অবাম, অরাজনৈতিক দলগুলি সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরাবার জন্য কাজ করেছে।কেন্দ্রে রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করার জন্য বিজেপির ৬৪টি সংগঠন কাজ করেছে, প্রচার মাধ্যমকে বগলদাবা করে রাজ্যে টাকা ছড়িয়েছে।পেশিশক্তির ব্যবহার করেছে। বিজেপির সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আরএসএসের কাজকর্মে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে আরএসএসের কোনও ভূমিকা ছিল না। তারা ব্রিটিশকে সাহায্য করেছে। মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছে।এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস দলে ভোট ২০১৮ সালে আড়াই শতাংশে নেমে এসেছে যা ২০১৩ সালে একচল্লিশ শতাংশ ছিল। সেসব মানুষ আজ বুঝতে পারছে কি ভুল করেছেন। বিজেপি তাদের সহযোগী আইপিএফটি সরকার করেছে। কিন্তু যাদের ভোটে যারা মন্ত্রী বিধায়ক হয়েছেন তার দলের সমর্থকদের কোনও মর্যাদা দেয়নি। কোনওপ্রকার পাত্তা পেত না। তারা যে ভুল জায়গায় পা দিয়েছে, তা এখন বুঝতে পারছেন। যার ফলে প্রতিদিন পদত্যাগ, দলত্যাগ করে পুরানো জায়গায় ফিরে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিজেপি দলের প্রতি মানুষের ঘৃণাকে ঘুরিয়ে দেবার জন্য জনবিশ্বাস যাত্রা বা রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বলেন, ত্রিপুরায় এবার পরিবর্তন হবেই। মানুষের চেহারা দেখে পরিবর্তন হবে তা মোদি শাহ বুঝতে পেরেছেন। তাই আগরতলা শহরে রাতের অন্ধকারে রোডশো করেছেন। রাতে দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছেন,শলাপরামর্শ করেছেন। নির্বাচনি কাজে যুক্তদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। ত্রিপুরায় কংগ্রেস ও সিপিএম কাছাকাছি চলে আসবে, আসন সমঝোতা হবে তা বুঝতে পারেনি বিজেপি। তাদের মাথা বিগড়ে গেছে। ত্রিপুরায় ঘরে ঘরে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এই জনবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জনউচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। রাজ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, স্বাধীনভাবে কাজ করার, সাংবিধানিক অধিকার, নির্বাচন নিয়ে ত্রিপুরার বুকে প্রহসনে পরিণত করেছে। বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য কাজ করে চলছে। একমাত্র বিজেপি দল ছাড়া রাজ্যে অন্যকোনও রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না কথা বলতে পারবে না। গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ চালাতে পারবে না। এ কোন্ শাসন সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, জঙ্গলের এই শাসন দূর করার জন্য মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। ত্রিপুরায় জঙ্গলের রাজত্বের অবসানে কি পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও সিপিএম ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মত হলো। তিনি তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেন। ত্রিপুরা থেকে অরাজনৈতিক দূর করার জন্য দু’দলই সহমতে পৌঁছল।ত্রিপুরায় যে দু:শাসনের যুগ চলছে তার অবসানে এই দুই দল কাছাকাছি এসেছে। ত্রিপুরায় মানুষের বুকে যে পাথর চাপা পড়েছে তা সরিয়ে মানুষ পথে নামতে শুরু করলো। আজ ত্রিপুরা থেকে দু:শাসনের অবসানের সময় এসেছে। নির্বাচনের পরে রাজ্যে যে নতুন সংগ্রামের শুরু হবে, সেখানে ১০,৩২৩ নিয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যে সমস্ত ভাতাপ্রাপকের নাম তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে তাদের ভাতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। চাকরি প্রদানে নতুন নীতি গ্রহণ করে চাকরি কীভাবে দেওয়া যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কর্মচারীদের ডিএ দেবার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে। পুরানো পেনশন স্কিম চালু করা হবে। শূন্যপদ পূরণ হবে। তার জন্য মিসকল দিতে হবে না। কৃষক, শ্রমিকের উন্নয়নে জনমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভোটারদের প্রতি তার আহ্বান এখনও যারা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিজেপি আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। এখন একটাই লক্ষ্য আগামী ১৬ তারিখ রাজ্য থেকে দু:শাসনের অবসানে, নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষায়, শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, ধর্মনিরপেক্ষতাকে যারা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে তা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবে। আগামী নির্বাচন কাজে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সোনামুড়া খেলারমাঠে আয়োজিত সিপিএম দলের আজকের সমাবেশে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। লাল ব্রিগেডের তেজোদীপ্তময়তায় ভরা যৌবন আজ আছড়ে পড়েছে মহকুমা সদর সোনামুড়া শহরে।

Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

7 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

8 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

10 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

10 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

10 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

12 hours ago