কৃষি সংকল্প অভিযানে নয়া জাগরণ,৮ দিনে ১.২০ লক্ষ কৃষকের কাছে পৌঁছেছে কৃষিরথ, প্রশংসিত রাজ্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- টার্গেট ছিলো বারোদিনে সারা রাজ্যে এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার কৃষককে এই মেগা কৃষি কর্মসূচিতে যুক্ত করার। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও আটদিনে সারা রাজ্যে এক লক্ষ কুড়ি হাজার কৃষককে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে। হাতে আরও চারদিন সময় আছে। এই চারদিনে টার্গেট পূরণ করে আরও বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে বলে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ। গত ২৯ মে থেকে সারা দেশের সাথে রাজ্যেও শুরু হয়েছিলো বিকশিত ভারত কৃষি সংকল্প অভিযান। চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। টানা বারোদিনের এই মেগা কৃষি সচেতনতা কর্মসূচিতে রাজ্যে ৮৬৪টি কৃষক সভা, প্রতিদিন বাহাত্তরটি করে সভা এবং এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার কৃষকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী নিজেও প্রতিদিন রাজ্যের একাধিক কৃষক সভায় অংশ নিয়ে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছেন। এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী শনিবার বলেন, রাজ্যের পাহাড়, সমতলের মাঠে-ঘাটে এখন এক অন্যরকম আবেগ। এক অন্যরকম আশাবাদ তৈরি হয়েছে। কৃষকের মুখে আজ হাসি, মাটির গন্ধে ভরপুর বিশ্বাস। কারণ, রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে প্রি-খারিফ ক্যাম্পেইনের অঙ্গ হিসাবে শুরু হওয়া ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’ রথযাত্রা রীতিমতো এক কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছে।কেননা, এই মেগা কর্মসূচিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্য-সদস্যা, সকল বিধায়কগণ, এমডিসি পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুর নিগম, পুর পরিষদ, নগর পঞ্চায়েতের সমস্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কৃষি, উদ্যান ও প্রাণীসম্পদ দপ্তরের সমস্ত স্তরের আমলা, আধিকারিক এবং কর্মীরা এই কর্মসূচিকে সফল করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে চলছেন। রাজ্যের ইতিহাসে এর আগে এত বড় কর্মকাণ্ড আর হয়নি। মন্ত্রীর কথায়, কৃষকই ভগবান। তিনিই অন্নদাতা। কৃষককে প্রণাম মানেই ভগবানকে প্রণাম করা।
এটা ঠিক যে, বর্তমান সময়ে রাজনীতির কোলাহলে এমন হৃদয়গ্রাহী দৃষ্টিভঙ্গি বিরল। এ যেন প্রশাসন আর কৃষকের একাত্মতার প্রতীক।

গত ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই রথযাত্রা যে উৎসাহ এবং গতিতে চলছে, তাতে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি দপ্তর। প্রতিদিন গড়ে ৭২টি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজ্যের আটটি জেলা জুড়ে। যা নিঃসন্দেহে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ। এই রথযাত্রা শুধু প্রচার নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর বাস্তব উদাহরণ স্থাপন করছে মাঠে মাঠে। প্রতিটি রথে রয়েছে এলইডি স্ক্রিন/টিভি, সাউন্ড সিস্টেম, মিনি ডেমো প্লট- যার মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে ড্রোন স্প্রে, জৈব চাষ, সূর্যমুখী এবং উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের মতো আধুনিক প্রযুক্তি। পাশাপাশি, কৃষকদের জানানো হচ্ছে কীভাবে মাটির স্বাস্থ্য বুঝে চাষ করতে হবে।
মোবাইল সয়েল টেস্টিং ভ্যান ইতিমধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্তে গিয়ে কৃষকদের জমির গুণগতমান পরীক্ষা করে জানাচ্ছে কোন ফসল সেই জমিতে লাভজনক হবে। এর ফলে শুধু উৎপাদন বাড়ছে না, খরচও কমছে। মন্ত্রী রতন লাল নাথ এদিন কমলাসাগরের ফুলতলিতে বলেন, আমরা ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার চাই। কাগজেকলমে নয়, মাঠে মাটিতে প্রকল্পের সাফল্য দেখতে চাই। এই রথযাত্রা তারই অঙ্গ।
রাজ্যের আটটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK) এখন কৃষকের আশ্রয়। আগে যেখানে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল, এখন সেখানে ফসল নির্বাচন, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ব্যবহার, ফসল সংরক্ষণ সব কিছুতেই কৃষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় গঠিত হয়েছে বহুমাত্রিক টেকনিক্যাল টিম, যেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ দপ্তরের বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন। ফলে কৃষকের সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
শুক্রবার সিপাহিজলা জেলার ফুলতলি গ্রামে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে রতন লাল নাথের সঙ্গে ছিলেন কমলাসাগর বিধানসভার বিধায়ক অন্তরা দেব সরকার।তার কথায় মন্ত্রী রতন লাল নাথের নেতৃত্বে ত্রিপুরার কৃষিব্যবস্থায় গতিও এসেছে, দিশাও বদলেছে। তিনি জানান, শালগড়া, আমবাসা, বিলোনীয়া, গণ্ডাছড়া বা পাহাড়ের ছোট ছোট গ্রামেও এখন বিজ্ঞানসম্মত কৃষি নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটা নিছক প্রচার নয়, এ এক জাগরণ।কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের সফল বাস্তবায়নে ত্রিপুরা শীর্ষ রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।