এবার বিহার কার

বিহারে বিধানসভা নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট জারি হতে চলেছে। এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচন বেজায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বে এসআইআর নিয়ে আগেভাগেই বিহারের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। একই সাথে বিহারের নির্বাচন আরও কয়েকটি কারণে এবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গত ২ দশকের বেশি সময় পর এবারই প্রথম প্রায় নীতীশবিহীন নির্বাচন হতে যাচ্ছে বিহারে। কেননা বর্তমানে এনডিএ জোটের প্রধান মুখ তথা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নীতীশ কুমার বহাল থাকলেও বর্তমানে তাকে কোথাও প্রায় প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন ওঠেছে তিনি কি পুরোপুরি সুস্থ নন? সুতরাং বলা যায়, আসন্ন নির্বাচনে যদি এনডিএ ফের বিহারের মসনদে আসীনও হয় তাহলে নীতীশ কুমারকে সম্ভবত আর দেখা যাবে না মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। গত কয়েকমাস ধরেই বিহারের রাজনীতিতে প্রায় অনুপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বিহারের এই ‘পল্টুরাম’ গত প্রায় ২ দশক ধরে নিজেকে হয় এনডিএ শিবিরে না হয় উল্টো দিকের ‘মহাগঠবন্ধন’ শিবিরে জিইয়ে রেখেছেন। সেই নিরিখে লালু জমানার পর নীতীশ কুমারই বিহারের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ছিলেন। কিন্তু এবারই প্রথম নীতীশ কুমার প্রায় আনফিট অবস্থায় রয়েছেন। ফলে এবার তিনি প্রচারে থাকবেন কিনা তা বলা মুশকিল। দ্বিতীয়ত, বিহারের নির্বাচনে বহুদিন পর এবার তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাব ঘটেছে। একদা রাজনৈতিক ভোটকুশলী হিসাবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর (পি কে) বিহারে নয়া দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে গোটা বিহার চষে বেড়িয়েছেন। এবার তিনি শাসকের ঘরে হানা দিয়ে একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ করছেন এনডিএ নেতাদের। কখনো এনডিএ’র আয়বহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ করছেন, কখনো বা এনডিএ নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন। তার এই সমস্ত অভিযোগের জুতসই জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন এনডিএ নেতারা। অন্যদিকে বিহারের আত্মগরিমা ফিরে পেতে যুবকদের কর্মসংস্থান, যুবক/যুবতীদের গা থেকে ‘বিহারী শ্রমিক’ তকমা যাতে মুছে যায় সেই ডাক দিয়েছেন পি কে। তার নবগঠিত জনস্বরাজ পার্টি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে তা বোঝাতে চেষ্টা করছে। এবার তাই বিহারে আর দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে হচ্ছে না তা ধরেই নেওয়া যায়। গত ২০২০ সালের ভরা কোভিড চলাকালীন রাজ্যে যে শেষবারের মতো নির্বাচন হয় তাতে মহাগঠবন্ধন এবং এনডিএ উভয় পক্ষই ৩৬% করে ভোট পায়। কিন্তু সরকার গড়ে এনডিএ কিছু আসনের ব্যবধানে। এবার নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর কোন্ শিবিরে বাড়া ভাতে ছাই দেন তাই দেখতে মুখিয়ে রয়েছে এখন বিহারের রাজনৈতিক মহল তথা দেশের রাজনৈতিক মহল।
অপরদিকে বিরোধী মহাগঠবন্ধন জোটের তরফে কংগ্রেস এবার কিছুটা শক্তি বৃদ্ধি করেছে বিহারে তা বলা যায়। সাম্প্রতিক রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রা বেশ সাড়া ফেলেছিলো রাজ্যে। তাই এবার কংগ্রেস কিন্তু বেশি আসন প্রত্যাশা করছে আরজেডির কাছ থেকে। আরজেডি অবশ্যই বিরোধী জোটে বড় শক্তি। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার আরজেডির তেজস্বী যাদবই। তেজস্বীও ইতোমধ্যে একটি যাত্রা বের করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। ফলে এবারও বিরোধীরা বেশ একটা শক্তপোক্ত ভাব নিয়ে বিহারে নির্বাচনে যাচ্ছে। এনডিএ-ও ক্ষমতায় রয়েছে অনেকদিন ধরে। প্রধানমন্ত্রী দু’দফায় রাজ্যের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ও আরজেডি কংগ্রেস জোট এনডিএকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন জোটেনি বিরোধীদের।
এবারও বিরোধীরা প্রত্যাশা করছে বিরাট কিছু। কিন্তু প্রাপ্তি কী জুটবে তা সময়ই বলবে। এরপরও বলা যায় বিহার ভোট এবার অনেক হিসাবনিকাশ পাল্টে দিতে পারে। তবে পি কে শেষমেশ ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে কিনা তার কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমনও হতে পারে পিকে বিরোধীদের ভোট কেটে তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে এনডিকে সুবিধা করে দেবে। তবে সময়ই এর জবাব দেবে। বিহার নির্বাচনের দিকে তাই আপাতত চোখ দেশের আমজনতার। ইতোমধ্যেই এসআইআর পরবর্তী অধ্যায়ে প্রথম নির্বাচন হবে বিহারে। তাই এর কোনো প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কিনা তাও দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল। রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চোর’ ইস্যু কতখানি মহাগঠবন্ধনকে ফায়দা দেয় তা দেখারও কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।

Dainik Digital: