এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলা ভাষা ক্লাসিকেল ল্যাঙ্গুয়েজ স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেলো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বৃহস্পতিবার বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়।বাংলা ভাষার পাশাপাশি মারাঠি,পালি, প্রাকৃত ও অসমীয়া এই চারটি ভাষাকেও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে সরকার।
ধ্রুপদী ভাষা বলতে এমন সব ভাষাকে বোঝায়, যেগুলি দেড় হাজার বছর কিংবা তারও বেশি পুরনো।শুধু তাই নয়, ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে তাকেই মর্যাদা দেওয়া হয় যাদের একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, যাদের প্রাচীনত্ব ও সাহিত্যের ঐতিহ্যটি কোনভাবেই অন্য কোন সাহিত্য বা ভাষার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেনি। বরং সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বাবলম্বী ভাবেই এই ধরনের ভাষা গড়ে উঠেছিল।আরও স্পষ্ট করে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করলে বলা যায় ধ্রুপদী শব্দের অর্থই হলো অত্যুৎকৃষ্ট,গুরুগম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ কোন বিষয়। মূলত ধ্রুপদী শব্দটি সাহিত্য ও শিল্প চর্চার অঙ্গনেই বেশি করে প্রয়োগ হতে দেখা যায়। যেমন ধ্রুপদী সাহিত্য, ধ্রুপদী সঙ্গীত, ধ্রুপদী নৃত্য।ঠিক তেমনি যে ভাষা সবচেয়ে প্রাচীন,সমৃদ্ধ, আভিজাত্যপূর্ণ এবং যে ভাষার প্রাচীন সমৃদ্ধ সাহিত্য রয়েছে তাকেই ধ্রুপদী ভাষার আসনে বসানো হয়।এতদিন দেশে মাত্র ৬টি ভাষা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে মর্যাদা ও স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল।এবার সংস্কৃত, তেলেগু, তামিল, মালয়ালাম, কন্নড় ও ওড়িয়া এই ছয়টি ভাষার সঙ্গে এক আসনে বসার সম্মান পেলো বাংলা, পালি, মারাঠি, প্রাকৃত ও অসমীয়া।
বাংলা ভাষা যে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন,সমৃদ্ধ, মর্যাদা ও আভিজাত্যপূর্ণ ভাষা এই নিয়ে সন্দেহ ছিল না কোন কালেই।শুধু প্রাচীনত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ ঐতিহ্যের কথাই নয়, বাংলা ভাষা এই মুহূর্তে ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কথিত ভাষা এবং বিশ্বের ষষ্ঠভাষা, যে ভাষায় সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলেন।কিন্তু তারপরেও বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করতে হলো। ভারতে ধ্রুপদী ভাষা ঘোষণার ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে সাহিত্য একাডেমি ভাষা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে।তারা নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোন ভাষা ধ্রুপদী কিনা সেই সম্পর্কিত সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়। মূলত: ৫টি বিষয়কে এক্ষেত্রে মাথায় রেখে এর মূল্যায়ন করা হয়। যেমন,সংশ্লিষ্ট ভাষার দেড় থেকে দুই হাজার বছরের ইতিহাস থাকতে হবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ভাষায় কথা বলা বা লেখার ইতিহাস থাকতে হবে।সংশ্লিষ্ট ভাষায় গদ্য ও পদ্য লেখার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ভাষাটি অনেক পুরনো তা প্রমাণের জন্য কোন শিলালিপি এবং দলিল দস্তাবেজ থাকতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা,ভাষাকে
চলায়তনের মধ্যে আটকে রাখলে হবে না সেই ভাষা ও সাহিত্যকে সময়ের সাথে বিবর্তিত হতে হবে।কিন্তু দেখা গেল, ভাষা হিসেবে বাংলা নির্দিষ্ট মানদণ্ডকে অনেক আগেই স্পর্শ করলেও তার স্বীকৃতি মেলেনি।২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সংস্কৃতির সঙ্গে তামিল, তেলেগু, মালয়ালামকে ধ্রুপদী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাংলার ভাগ্যে সেই সম্মান জোটেনি। পরবর্তী সময়ে ওড়িয়াকেও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।কিন্তু বাংলা ব্রাত্যই থেকে যায়। বিতর্ক নতুন করে দেখা দেয় ২০২০ সালে।যখন কেন্দ্র তার নয়া শিক্ষানীতিতে ঘোষণা করে সংস্কৃত, ওড়িয়া, তেলেগু, তামিল, কন্নড এবং মালয়ালাম ভাষায় যেকোন রাজ্যেই এখন থেকে পড়াশোনা করা যাবে।কিন্তু বাংলা ভাষার ভাগ্যে সেই শিকে জুটল না।তারপরই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে দলিল দস্তাবেজ নথি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।পাতার পর পাতা গবেষণাপত্র জমা পড়তে থাকে দিল্লীতে।অবশেষে ধ্রুপদী জগতে বাংলা ভাষার ঠাঁই মিললো।বাংলা ভাষার উপর সুদীর্ঘ বঞ্চনার অবসান ঘটলো। মনে রাখতে হবে, এই স্বীকৃতির অর্থ শুধুই সম্মান আর খুশিতে গদগদ হওয়া নয়।এখন থেকে বাংলা ভাষার জন্য বরাদ্দ থাকবে কেন্দ্রের তরফে একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধা।এই ভাষার প্রসার ও প্রচারের জন্য গড়া হবে আলাদা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়।এই ভাষায় কাজের জন্য থাকবে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার।থাকবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই ভাষার জন্য সাম্মানিক চেয়ার। এছাড়াও সেন্টার ফর এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা করে বিশেষভাবে পড়ানো হবে বাংলা ভাষা।গড়া হবে বিশেষ গবেষণা কেন্দ্র।বাংলা নিয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এখন থেকে বৃত্তি পাবেন পড়ুয়ারা। বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। কিন্তু যোগ্যতা সত্ত্বেও কেন এতকাল বাংলা ভাষাকে বঞ্চনা করা হলো সেটাই বড় রহস্য। মনে রাখতে হবে স্বীকৃতি হয়তো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।কিন্তু ভাষা বেঁচে থাকে তার প্রচলন ও ব্যবহারের গতির মধ্য দিয়ে।বাংলা ভাষা সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

4 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

5 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

6 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

7 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

7 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

8 hours ago