আলোকোজ্জ্বল উৎসব, বৈঠকে রতন,সমস্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল চলছে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দুর্গাপুজো উপলক্ষে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের সমস্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। হেল্পার, লাইনম্যান থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তারা পর্যন্ত সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন যাতে উৎসবের এক মুহূর্তও অন্ধকারে না কাটে। বৃহস্পতিবার আগরতলায় নিগমের কর্পোরেট কার্যালয়ে দুর্গাপুজো উপলক্ষে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সার্কেল, ডিভিশন ও সাব-ডিভিশন স্তরের মোট ১২৩টি কেন্দ্র থেকে কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। নিগমের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ, ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু, কারিগরি অধিকর্তা ড. সুবীর সেন, ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের কারিগরি অধিকর্তা শুভজিৎ ঘোষ, ডিজিএম কর্পোরেট ও রাজ্যভিত্তিক কন্ট্রোল রুমের প্রধান শিশির দেববর্মা এবং স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অনিল দেববর্মা। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং। ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন থেকে যুক্ত ছিলেন জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা এবং অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার। এছাড়াও নিগমের বিভিন্ন সার্কেল থেকে অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সহ অন্যান্য কর্মী আধিকারিকরা যুক্ত ছিলেন।
মন্ত্রী বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের জানান, দুর্গোৎসবকে আলোর বাহারে ভরিয়ে তুলতে ১৬টি ডিভিশন ও ৭৯ টি সাব-ডিভিশন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। গত বছর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৩১২ মেগাওয়াট। এবার আমরা ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবস্থা রেখেছি। প্রয়োজনে রিয়েল টাইম মার্কেট থেকেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেনা হবে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে পুজোর সময় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৩৩২ মেগাওয়াট, ২০২৩ সালে ৩১১ মেগাওয়াট, আর ২০২৪ সালে ৩১২ মেগাওয়াট। এ বছর চাহিদা আরও বাড়তে পারে অনুমান করে চাহিদার চেয়েও বেশি বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুধু বিদ্যুতের জোগানই নয়, জরুরি পরিস্থিতির জন্যও নিগম বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি সাব-ডিভিশনে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার, গাড়ি, অতিরিক্ত কর্মী মজুত রাখা হয়েছে যাতে প্রয়োজনে দ্রুত মেরামতি করা যায়। পাশাপাশি ১৯১২ নম্বরের হেল্পলাইন ছাড়াও প্রতিটি সাব-ডিভিশনে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া রাজ্যভিত্তিক কন্ট্রোল রুমের নম্বর ৬০৩৩১৩১৩০৬। যেখান থেকে সরাসরি সমস্যার সমাধান হবে।
আগরতলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুজো এলাকা এবং ভিড় প্রবণ এলাকায় নিগমের বিশেষ কারিগরি দল ষষ্ঠী থেকেই সক্রিয় থাকবে। বনমালীপুরে দুটি দল, আইজিএম চৌমুহনীতে একটি দল, প্রগতি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি দল এবং শতদল সংঘ, মর্ডান ক্লাব, আমরা তরুণ দল, রামঠাকুর সংঘ, নেতাজী চৌমুহনী, সূর্য চৌমুহনী, উত্তর গেট, শংকর চৌমুহনী ও বটতলায় বিশেষ টিম নিয়োগ করা হয়েছে। যে কোনও ধরনের সমস্যার খবর পেলেই তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমাধান করবেন।
মন্ত্রী রতনলাল নাথ পুজো উদ্যোক্তাদেরও বৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে যথাযথ সতর্কতা বজায় রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তার কথায়, শুধু মন্ডপ নয়, গোটা রাজ্যকেই আরমা আলো ঝলমলে রাখতে চাই। দুর্গোৎসব মানেই আলো, আর সেই আলোর পেছনে বিদ্যুৎ নিগমের হাজারো কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম।
গত বছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজো হয়েছিল রাজ্যে। এবছরও একই সংখ্যার হিসেব ধরে নিগম প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুজোর সংখ্যা আরও কিছু বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে আত্মবিশ্বাসী বিদ্যুৎ দপ্তর, জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী। তিনি বলেন, শারদোৎসব মানেই আনন্দ, ভিড়, আলোর বাহার আর এক অনন্য আবহ। কিন্তু সেই আনন্দকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আলোয় ঝলমলে রাখার পেছনে থাকে একদল মানুষের নিরলস পরিশ্রম। অন্যরা যখন মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়ান, প্যান্ডেলে আলো ঝলমলে উৎসব উপভোগ করেন, তখন বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীরা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ছুটিহীনভাবে কাজ করে যান। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অন্যরা যখন সপরিবারে উৎসব উপভোগ করবেন, বিদ্যুৎ কর্মীরা তখন ছুটিহীনভাবে উৎসবকে আলোয় ভরিয়ে তোলার জন্য কাজ করবেন। বলা যায়, দুর্গোৎসবের প্রকৃত অজানা নায়কেরা তারাই যাদের দিনরাতের পরিশ্রমে রাজ্যের প্রতিটি পুজো মন্ডপে আলো জ্বলে ওঠে। নিগমের কর্মীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী।

Dainik Digital: