আরজি কর টু দুর্গাপুর

আরজি কর কাণ্ডের রেশ এখনও জনমনে তাজা।এর মধ্যে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতি এখন তোলপাড়। সেই তোলপাড়ে আরও ঘৃতাহুতি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিকৃত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। সর্বত্র ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তোলপাড় হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম। প্রশ্ন উঠেছে, একজন দায়িত্বশীল মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এমন কথা বলেন কীভাবে?
দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণ কাণ্ডের পর ঠিক কি বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী? মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রীদের রাতে হস্টেল থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়েদের নিজেদেরও সুরক্ষার বিষয়টি ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার এই মন্তব্য ঘিরেই বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে খবরে প্রকাশ, রাত সাড়ে বারোটায় নয়, ওই নির্যাতিতা ছাত্রী শুক্রবার রাত ৭ টা ৫৮ মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তার এক সহপাঠীকে নিয়ে বেরিয়ে যায় খাবার আনতে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নির্যাতিতা ছাত্রীটি পুলিশকে জানিয়েছে, কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর কিছু পরেই তিন যুবক তাদের পিছু নেয়। ভয় পেয়ে ছাত্রী এবং তার সহপাঠী দৌড়াতে শুরু করে। সহপাঠী কোনো মতে পালাতে সক্ষম হলেও, ছাত্রীকে ধরে ফেলে অভিযুক্তরা। তারপর পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তিন যুবক তার উপরে পাশবিক অত্যাচার চালায়। পরে সেখানে আরও দুই যুবক আসে। তারাও একই অত্যাচার করে বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা ছাত্রীর মোবাইল ফোন থেকেই তার সহপাঠীকে ফোন করে ডেকে নেয়। তারপর সহপাঠীর সঙ্গেই কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান নির্যাতিতা। ছাত্রীর অভিযোগ মূলে, পাঁচজন। অভিযুক্তকেই পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। নির্যাতিতা ছাত্রীর মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজ পেয়েছে। কেননা, নির্যাতিতার মোবাইল ফোনটি আগেই কেড়ে নিয়েছিল অভিযুক্তরা। অভিযুক্তদের কাছ থেকেই সেই মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পরই উত্তপ্ত হয়ে উঠে দুর্গাপুর।মেডিকেল কলেজের পড়ুয়ারা এককাট্টা হয়ে নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়। একই সাথে বঙ্গ রাজনীতিও সরগরম হতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের একবার বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও প্রতিবাদে সরব হয়। এখানেই শেষ নয়, বঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা সরকারও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও তার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে। কারণ, নির্যাতিতা ডাক্তারি ছাত্রীটি ওড়িশার বাসিন্দা। ওড়িশার মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে জাতীয় মহিলা কমিশনও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকেনি। দুই কমিশনই দুর্গাপুরে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিতা ছাত্রীটির সাথে গিয়ে কথা বলেছে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিতর্কিত মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা ডা. অর্চনা মজুমদার। তিনি বলেছেন, আমরা কীভাবে বলতে পারি যে সন্ধ্যা থেকে অর্থাৎ দিনে বারো ঘন্টা একটি মেয়েকে ঘরে বন্দি থাকতে হবে। মহিলারা হাসপাতালে, আইটি সেক্টরে এবং সর্বত্র পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করছে। আজকের ভারতীয় মেয়েরা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এই কোন্ যুগের কথা বলছেন? তার রাজ্যে মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব ঊনার নিজের। সেটা না করে তিনি রাতে মেয়েদের না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
শুধু জাতীয় নির্বাচন কমিশনই নয়, মমতার এই বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়েছেন ওড়িশার উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পরিদা এবং মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন শোভনা মাইতি। উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মমতার এই মন্তব্যে মহিলারা হতাশ হবেন। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থেকে এ ধরনের কথা কখনই আশা করা যায় না। অন্যদিকে শোভনার অভিযোগ, নারী হয়েও নারীদের যন্ত্রণা বোঝেন না মমতা। মেয়েদের রাতে বেরোতে বারণ না করে মমতার উচিত তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সব মিলিয়ে বঙ্গ এখন তোলপাড়। ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলে বঙ্গে হবে হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচন। হাতে খুব একটা বেশি সময় নেই।
নির্বাচনের উত্তাপ এখন থেকেই তুঙ্গে। এর মধ্যে দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ড এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিতর্কিত মন্তব্য, তাকে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। ড্যামেজ কন্ট্রোল কীভাবে করবেন, সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital: