আজ ঐতিহ্যের চৈত্র সংক্রান্তি ও চড়ক মেলা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাত পোহালেই চৈত্র সংক্রান্তি। পরদিন পয়লা বৈশাখ। আবহমানকাল ধরেই বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা বছরের শেষদিন হিসাবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য যুগ যুগ ধরে বছরের এ দিনটিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন । আগামীকাল ত্রিশ চৈত্র। বিদায় জানানো হবে পুরানোকে। পিছনে পড়ে থাকবে বাংলা ১৪২৯ সালের সমস্ত সুখ, দুঃখ জড়ানো স্মৃতি। পরদিন পয়লা বৈশাখ। শুরু হবে নতুন বছর ১৪৩০ সাল। সেই সাথে শুরু হবে সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা ।


চৈত্র সংক্রান্তি আর নববর্ষ যদি পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয়, তাহলে উৎসবের আমেজের দিক থেকে চৈত্র সংক্রান্তির পাল্লা কিছুটা হলেও ভারী। আজও গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে হাজারো নিয়ম,রীতি এবং নানান অনুষ্ঠান প্রচলিত রয়েছে। শাস্ত্র মতে প্রত্যেক বাংলা মাসের শেষদিনগুলিকে বলা হয় সংক্রান্তি। কিন্তু সভ্যতার আধুনিকতায় দৌড়ে সেইসব সংক্রান্তি চাপা পড়ে গেছে। এখন জনপ্রিয় রয়েছে শুধু দুটি সংক্রান্তি। একটি পৌষ সংক্রান্তি,অপরটি হলো চৈত্র সংক্রান্তি। এই দুই সংক্রান্তিকে ঘিরে এখনও বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্য এবং পরম্পরা টিকে আছে।চৈত্র সংক্রান্তিতে অন্যতম প্রধান উৎসব হচ্ছে চড়ক পুজো ও মেলা। এটি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতি ও লোক উৎসব। কথিত আছে, এইদিনে শিবের উপাসক বাণ রাজা দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সাথে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের উপাসনা করেন। মহাদেবকে তুষ্ট করে অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ রক্ত দিয়ে অভিষ্ট সিদ্ধ করেছিলেন। সেই স্মৃতিতে শৈব সম্প্রদায়ের মানুষ শিবপ্রীতির জন্য উৎসব করে থাকেন।


পুরো চৈত্র মাস ধরে চলে এই শিবের গাজন। শেষ হয় চৈত্রের শেষদিন চড়ক পুজোর মাধ্যমে। এই চড়ক পুজোতে প্রচলিত লোক সংস্কৃতির বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে। যা শুনে অনেকের গায়েই কাঁটা দিতে পারে। যেমন কুমিরের পুজো, জলন্ত ছাইয়ের উপর হাঁটা, কাঁটা, ছুরি বা ধারালো কিছুর উপর লাফানো, শিবির বিয়ে, অগ্নিনৃত্য ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ । গ্রাম বাংলায় এইসব পুজোর সঙ্গে রয়েছে ভূতপ্রেত বা পুনর্জন্মবাদের উপর বিশ্বাস। মনে করা হয়, নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ। চড়ক গাছের সাথে ভক্তদের লোহার বড়শি দিয়ে গেঁথে দ্রুতবেগে ঘোরানোর রীতি রয়েছে। সেইসাথে পিঠে, হাতে, পায়ে, জিভে এবং শরীরের নানা অঙ্গে লোহা গেঁথে দেওয়া হয়।যদিও সময়ের সাথে সাথে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাংলা ও বাঙালির এই ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। তবুও কিছু জায়গায় আজও চৈত্র মাসে বাড়ি বাড়ি শিবের গাজন, চৈত্র সংক্রান্তির দিনে চড়ক পুজোর প্রচলন দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, আধুনিকতার জাঁতাকলে কতদিন এই ঐতিহ্য, গ্রামবাংলায় এই লোক সংস্কৃতি টিকে থাকবে? কতদিন টিকে থাকবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে চৌদ্দ রকম পাতার শাক ও পাচন খাওয়ার রীতি ও পরম্পরা ?

Dainik Digital

Recent Posts

পদ্মশ্রী প্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞান সুবান্না আয়াপ্পানের রহস্যমৃত্যু,!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত কৃষি বিজ্ঞানী ৬৯ বছর বয়সি সুবান্না আয়াপ্পান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ…

5 hours ago

ব্যতিক্রমী সম্পর্কের খোঁজ!!

ছয় বৎসর পর পর ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে ছয় জড়াইয়াছে। একটি যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ তৎপরতায় ময়দানে…

5 hours ago

রেশনে ডালের দাম বাড়ল পাঁচ টাকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের রেশনশপে একলাফে মশুরি ডালের মূল্য প্রতিকিলোতে ৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার।রেশনশপে…

6 hours ago

টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন কোহলি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলো বিরাট কোহলি।ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধ রাখলো না।রোহিত…

6 hours ago

সমাজিকমাধ্যমে বিদেশসচিব মিস্রীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ নেটিজেনরা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্ত্রি। রবিবার সকাল থেকে…

7 hours ago

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ফের উচ্চস্তরীয় বৈঠক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রবিবার সকালে উচ্চস্তরীয় বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ এদিন তাঁর লোক কল্যাণ…

1 day ago