আওয়ামী লীগবিহীন যেকোনো ভোটই অবৈধ’দেশের ভোটে ফিরতে চান শেখ হাসিনা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, তার দেশে ফেরা নির্ভর করছে “অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র” পুনরুদ্ধার, আওয়ামী লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন পরিচালনার উপর।
পিটিআইকে দেওয়া ইমেল সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা অনির্বাচিত ইউনুস প্রশাসনকে “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিপন্নকারী এবং চরমপন্থী শক্তিকে শক্তিশালী করার” হাতিয়ার বলে অভিযোগ করেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে তার সরকারের পররাষ্ট্রনীতির তুলনা করে বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে “বিস্তৃত ও গভীর সম্পর্ক” ইউনুসের সময়ে এক বোকা নীতির সম্মুখীন। আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাসিনা বলেন, ভারত সরকার এবং তার জনগণের সদয় আতিথেয়তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
“আমার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, বাংলাদেশি জনগণের চাহিদা মতো অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন। অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে অবশ্যই আওয়ামী লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের পাঁচ আগষ্টে দেশ ত্যাগ করেন। সহিংস ও বিশাল আন্দোলনের ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ভারতে চলে আসেন। ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত হয়। তার সরকার বিক্ষোভ মোকাবিলায় ভুল করেছে কিনা জানতে চাইলে ৭৮ বছর বয়সি নেত্রী বলেন,অবশ্যই আমরা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি এবং এটা দুঃখজনক। তিনি তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, এই ভয়াবহ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু আমার মতে, কিছু দায় তথাকথিত ছাত্রনেতাদের(পেছনে থাকা পাকা রাজনৈতিক ব্যক্তি) উপরও বর্তায়, যারা জনতাকে উস্কে দিয়েছিল। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানানোর খবর হাসিনা প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যেকোনো নির্বাচনের বৈধতা থাকবে না।
হাসিনা বলেন, কয়েক কোটি মানুষ আমাদের সমর্থন করে। এটা আমাদের দেশের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। জনগণের প্রকৃত সম্মতিতে শাসন করার জন্য একটি সরকার খুবই প্রয়োজন। আমি আশা করি এই বোকামিপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। সরকারে হোক বা বিরোধী দলে, আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে। ভারত “সবসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বান্ধব” বলে জোর দিয়ে হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে “বোকামিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী” কূটনৈতিক ভুলের মাধ্যমে নয়াদিল্লীর সাথে. সম্পর্ক বিপন্ন করছে বলে অভিযুক্ত করেন।”ভারতের প্রতি ইউনুসের শত্রুতা এক বোকামি এবং চরমভাবে আত্ম-পরাজয়কারী। দুর্বল শাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করছেন ও প্রমাণ করছেন চরমপন্থীদের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, আমি আশা করি মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসার আগে তিনি আরও অনেক কূটনৈতিক ভুল করবেন না।বাংলাদেশের বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয়দের শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দেশবাসীর মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে না। ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিল এবং থাকবে। হাসিনা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে বিচারের মুখোমুখি হতে রাজি রয়েছেন। কিন্তু ইউনুস এ ধরনের প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেছেন, কারণ একটি নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালে তাকে খালাস করা হবেই। আমি বারবার ইউনুসের সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছি যে তারা যদি তাদের মামলার প্রতি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়, তাহলে তারা যেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে। ইউনুস এই চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে চলেছেন কারণ তিনি জানেন যে আইসিসি, একটি সত্যিকারের নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল। অবশ্যই আমাকে খালাস দেবে। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, যে ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে সেখানে প্রসিকিউটররা আমার মৃত্যুদণ্ড চাইছেন, তারা রাজনৈতিক বিরোধীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাকে এবং আওয়ামী লীগ উভয়কেই নিকেষ করার চেষ্টা করছে। শত্রু দমন করার জন্য তারা মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার করবে। এই সত্য প্রকাশিত। এতে প্রমাণিত যে, গণতন্ত্রে তাদের কতটা শ্রদ্ধা নেই। শেখ হাসিনার মতে, ইউনুস কিছু পশ্চিমা উদারপন্থীদের নিষ্ক্রিয় সমর্থন পাচ্ছিলেন। তারা এখন বুঝতে পারছেন, ভুলভাবে তাকে তাদের একজন বলে মনে করেছিলেন। শেখ হাসিনা আশা ব্যক্ত করেন, এখন যেহেতু তারা মন্ত্রিসভায় মৌলবাদীদের স্থান দিতে, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে এবং সংবিধান ভেঙে দিতে দেখছেন- এই ইউনুসের ওপর থেকে তারা হাত সরিয়ে নেবেই নিশ্চয়ই।

Dainik Digital: