অনলাইন প্রতিনিধি:-নতুন মোটর ভেহিকেল আইনে ওভারলোডিংয়ের শাস্তি স্পষ্ট। আইন অনুযায়ী কোনো ট্রাক বা পণ্যবাহী যদি তার নির্ধারিত ক্ষমতার বেশি বোঝা তোলে, তাহলে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অতিরিক্ত টনের নিরিখে বাড়তি টাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু মাঠের ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাব্রুম থেকে ধর্মনগর কিংবা অমরপুর থেকে সোনামুড়া- প্রায় সর্বত্রই রাস্তায় চলাচল করছে শয়ে শয়ে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক। অতিরিক্ত বোঝার চাপে চাকা বসে যাচ্ছে, ট্রাক দুলছে, ব্রেকের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তবুও এই ভয়ঙ্কর নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেই কোথাও।
এমনকী ধরা পড়লেও চালক-মালিকরা বাঁচছে আইনের ১৭৭ ধারার উপরে ভর করে।এই ধারাকে বলা হয় সাধারণ ব্যতিক্রম। এখানে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অভিযোগ, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ ও পরিবহণ দপ্তর ইচ্ছাকৃতভাবেই এই ধারায় জরিমানা করছে বা মামলা নিচ্ছে। ফলে আইন লঙনকারীরা অতি সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। সকালে পাঁচশো টাকা জরিমানা দিলে সারা দিন যতবার খুশি অতিরিক্ত বোঝাই নিয়ে চলতে পারছে বলে দাবি চালকদের। পথে যেকোনোও চেকপোস্টে রসিদ দেখালেই পুলিশ অবলীলায় ছাড় দিচ্ছে তাদের। যেন আইনভাঙার ‘দিনভর পাস’ মিলছে মাত্র পাঁচশো টাকায়।
এদিকে ট্রাক চালক ও মালিকরা বলেছেন, বাজারের প্রতিযোগিতা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে নির্ধারিত ক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য তুললে তাদের গাড়ি চালানোর খরচ ওঠে না। পণ্য পরিবহণের রেট কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত বোঝা তুলতে হচ্ছে।প্রশাসনও সব জানে। তাই মুখে কঠোর শাস্তির কথা বললেও বাস্তবে সেভাবে কড়া নজরদারি করে না। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, পুলিশের কাজ এখন আইন প্রয়োগ নয়, কেবল জরিমানার টার্গেট পূরণ করা। প্রতি থানাকে মাসিক জরিমানা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। সহজে টার্গেট ছোঁয়ার কারণে সাধারণ ব্যতিক্রম ধারাতেই জরিমানা কেটে কাগজপত্র গোছানো হয়ে যায়।
আইন প্রয়োগের এই শৈথিল্যের ফল ভুগছে মানুষ। রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ছে দ্রুত। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার রাস্তা মেরামত করলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ফের গর্ত ও ধস দেখা দিচ্ছে। সেতু ও কালভার্টে চির ধরে যাচ্ছে। কোথাও গাড়িসহ ভেঙে পড়ছে। সময়ের আগেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে সরকারী পরিকাঠামো। সর্বোপরি,এই অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাকগুলোর জন্য প্রায়ই ঘটে যাচ্ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ভারসাম্যহীন যানবাহনের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণহানি ও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে বলে অভিযোগ পথচলতি মানুষের। মানুষের ক্ষোভএখন তুঙ্গে। তাদের বক্তব্য, আইন সবার জন্য সমান হলে ওভারলোডিং অনেক কমত। আজ যারা নিয়ম মেনে গাড়ি চালাচ্ছে তারা বরং পিছিয়ে পড়ছে। কারণ বেশি বোঝা তুলেই তো মালিকরা কম দামে পণ্য টেনে বাজার দখল করছে। ফলে নিয়ম মানার উৎসাহ কমে যাচ্ছে চালকদের মধ্যেই। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সড়ক নিরাপত্তা চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে। ওভারলোডিং রোখার জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত ওজন মাপার স্টেশন ও নিয়মিত অভিযান। শুধু জরিমানা আদায়ের হিসেব নয়, আইনলঙ্ঘন কতটা কমল তা দিয়ে মূল্যায়ন শুরু করা জরুরি। আইন আছে, শাস্তি কঠোর। কিন্তু প্রয়োগ যদি ঢিলেঢালা থাকে, তবে আইন বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে আর কোনও লাভ হয় না। মানুষের প্রশ্ন, শাস্তির কথা কি শুধুই কাগজেই থাকবে, নাকি রাজপথেও দেখা যাবে তার বাস্তবরূপ?
আইন আছে, প্রয়োগ ঢিলেঢালা ফাইন দিয়ে ওভারলোডিং চুটিয়ে!!
The seal with red imprint FINE on white surface. Isolated. 3D Illustration